শ্রীলংকায় বিস্ফোরণ

অধিকাংশ হামলাকারী উচ্চ-শিক্ষিত, ধনী ঘরের সন্তান

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিবিসি জানায়, শ্রীলংকার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রাভন বিজয়বর্ধনে বলেছেন, রোববার গির্জা ও হোটেলে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নেয়া তরুণ-যুবকদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। 'তারা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট স্বাবলম্বী। পরিবারগুলোর যথেষ্ট টাকা-পয়সা রয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে তারা স্থিতিশীল।' হামলাকারীদের একজন ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিল। মন্ত্রী বলেন, 'খুবই উদ্বেগের বিষয় এটি।' যে আটজন আত্মঘাতী হামলাকারীকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দু'জন সহোদর। এই দুই ভাই কলম্বোর ধনী এক মসলা ব্যবসায়ীর দুই ছেলে বলে তদন্তকারীদের উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে। এই দুই ভাই কলম্বোর দুটো হোটেলে হামলা চালায়। তদন্তকারী একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এক ভাইয়ের নাম-ঠিকানা পাওয়ার পর তার বাড়িতে কমান্ডো পুলিশ গেলে ভেতরে এক ভাইয়ের স্ত্রী বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণে ওই নারী এবং তার দুই ছেলে মারা যায়। সঙ্গে নিহত হয় তিনজন পুলিশ কমান্ডো। একজন তদন্তকারী এএফপিকে বলেছেন, 'একটি পরিবার তাদের বাড়িতে সন্ত্রাসী সেল প্রতিষ্ঠা করেছিল।' এ প্রবণতা বিশ্বের সর্বত্র ঢাকায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের শীর্ষ গবেষক শাফকাত মুনির বলেন, বিশ্বজুড়েই দেখা যাচ্ছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই প্রধানত এ ধরনের সহিংস সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে। 'এটি একটি কমন প্যাটার্ন। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের, পশ্চিমা দেশগুলোতে লেখাপড়া করা অনেক তরুণ-যুবকের সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।' ২০১৬ সালে বাংলাদেশে হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের মাত্র দু'জন বাদে সবাই বিদেশে লেখাপড়া করেছিল। বাংলাদেশের পুলিশও বিভিন্ন সময় বলেছে, ধর্মীয় উগ্রপন্থায় জড়িতদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, ধনী ঘরের সন্তান। কেন এই প্রবণতা? শাফকাত মুনির, যিনি বাংলাদেশ সেন্টার ফর টেররিজম রিসার্চের প্রধান মনে করেন, অধিকাংশ সময় 'আইডেনটিটি ক্রাইসিস' বা আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে এই ধর্মীয় উগ্রপন্থায় দীক্ষার সূচনা হয়। তিনি বলেন, 'ধনী ঘরের অনেক সন্তান জীবনের একটি পর্যায়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন করে। একটা পর্যায়ে এসে তাদের মধ্যে অনুশোচনা তৈরি হয়। আত্মশুদ্ধির চিন্তা ঢোকে তাদের মাথায়। এ অবস্থায় তাদের ধর্মীয় উগ্রবাদে দীক্ষিত করা সহজ হয়ে পড়ে।' মুনির বলেন, 'প্রধানত ইন্টারনেটের মাধ্যমে যারা জিহাদি রিক্রুট করার কাজে লিপ্ত, তারা বিভিন্ন দেশের মুসলিম সমাজের এ ধরনের উচ্চবিত্ত পরিবারের মানসিকভাবে নাজুক অবস্থায় পড়া তরুণ-যুবকদের টার্গেট করে।' বিশ্বের বিভিন্ন সংকট সম্পর্কে বিকল্প ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অভাবে অনেক মুসলিম তরুণ-যুবক ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দেয়া ন্যারেটিভে আকর্ষিত হয়ে পড়েছে। 'এই সংকট বুঝে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এখন সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।' নিহত বেড়ে ৩৫৯ এদিকে শ্রীলঙ্কার কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে একযোগে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। গত রোববার ইস্টার পরবের দিন দেশটির তিনটি গির্জা ও চারটি হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত নিহত ৩২১ জন ও আহত প্রায় ৫০০ জন ছিল। মঙ্গলবার এ হামলায় দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক সাত জঙ্গির নাম প্রকাশ করে এরাই আত্মঘাতী হামলাগুলো চালিয়েছে বলে জানিয়েছে। গোষ্ঠীটি নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি। ?তাদের দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে তবে ইরাক ও সিরিয়ার বাইরে তাদের চালানো অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হবে এটি। মঙ্গলবার রাতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা '২৪ ঘণ্টার মধ্য' প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন দেয়া হলেও সেগুলো তার সঙ্গে শেয়ার করা হয়নি, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে 'কঠোর পদক্ষেপ' নেয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।