বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

ম্যালেরিয়া ঝুঁকির শীর্ষে ১৩ জেলা

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট দেশের সমতল অঞ্চলের তুলনায় পাহাড়ি জনপদে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। পার্বত্য তিন জেলাসহ ছোটখাটো পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত ১৩ জেলার ৭১টি উপজেলা এ রোগে আক্রান্তের শীর্ষে। এ ছাড়া সারা দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস- ২০১৯ পালিত হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'জিরো ম্যালেরিয়া স্টার্স্ট উইথ মি অর্থাৎ আমিই করব ম্যালেরিয়া নির্মূল'। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ রোগে মৃতু্যহার কম হলেও প্রতিবছর আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। এর মধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান তিন জেলা উচ্চ-ম্যালেরিয়াপ্রবণ। কারণ দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯১ শতাংশ এসব এলাকার। এরপর কক্সবাজার জেলাকে মধ্য এবং চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম ৯টি জেলাকে নিম্ন-ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে বান্দরবান জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৮৬২, রাঙ্গামাটিতে ১৩ হাজার ৮৩২, খাগড়াছড়িতে ৩ হাজার ৮৭৪, কক্সবাজারে ২ হাজার ৯২৩, চট্টগ্রামে ৪৬০, সুনামগঞ্জে ৫৯, মৌলভীবাজারে ৫০, সিলেটে ৪৪, হবিগঞ্জে ২২, নেত্রকোনায় ১৪০, ময়মনসিংহে ৩৩, শেরপুরে ১৭ ও কিশোরগঞ্জে ৩ জনসহ ১৩ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭১৯ জন। এ ছাড়া ২০১০ সালে সারাদেশে ৫৫ হাজার ৮৭৩ জন আক্রান্ত হয় এর মধ্যে মারা যায় ৩৭ জন, ২০১১ সালে আক্রান্ত হয় ৫১ হাজার ৭৯৫ জন মারা যায় ৩৬ জন, ২০১২ সালে আক্রান্ত ২৯ হাজার ৫১৮ মৃতু্য ১১, ২০১৩ সালে আক্রান্ত ২৬ হাজার ৮৯১ মৃতু্য ১৫, ২০১৪ সালে আক্রান্ত ৫৭ হাজার ৪৮০ মৃতু্য ৪৫ জন, ২০১৫ সালে আক্রান্ত ৩৯ হাজার ৭১৯ মৃতু্য ৯ জন, ২০১৬ সালে আক্রান্ত ২৭ হাজার ৭৩৭ মৃতু্য ১৭ জন, ২০১৭ সালে আক্রান্ত ২৯ হাজার ২৪৭ মৃতু্য ১৩ জন এবং ২০১৮ সালে আক্রান্ত হয় ১০ হাজার ৫২৩ মারা যায় মাত্র ৭ জন। পাবর্ত্য জেলাগুলোতে বেশি ম্যালেরিয়া প্রবণের কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় এবং বনাঞ্চল বেষ্টিত হওয়ায় সেখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। এমনকি পার্বত্য জেলাগুলোতে অনেক রোগীকে ১০ থেকে ১৫ বার পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এছাড়া এসব অঞ্চলে আক্রান্তের দিক থেকে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। গত ২০১৭ সালে শুধুমাত্র রাঙ্গামাটিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৯৫০ জন পুরুষ। একই সময়ে নারী আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৮০ জন। ২০১৮ সালে ১ হাজার ৬৭৯ জন। তবে রাঙ্গামাটি জেলায় এক বছরের নিচে শিশুদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ১৬ জন। ২০১৮ যা ১৪ জনে নেমে আসে। বিষয়টি সম্পর্কে রাঙ্গামাটি জেলার ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এন্ড্র বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা সাধারণত সন্ধ্যার পর কামড়ায়। নারী ও শিশুদের চেয়ে পুরুষরা বেশি সময় বাড়ির বাইরে থাকায় তাদের মশার কামড়ে সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাছাড়া পুরুষরা পাহাড়ে জুম চাষ ও কাঠ কাটার কাজে নিয়োজিত থাকে। ফলে সেখানে মশা কামড়ানোর ঝুঁকি বেশি থাকে। অন্যদিকে নারীরা বেশি সচেতন এবং পুরুষদের মতো নারীরা বাইরে কম থাকে বলে তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে থাকে। দেশে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ও কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের লাইন ডিরেক্টর ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা- বাংলাদেশ, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে গত ১০ বছরে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগোষ্ঠীর মাঝে ১০ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন বা এক কোটির অধিক মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী কীটনাশকযুক্ত (এলএলআইএন) মশারি বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮- সালে ১৩ লাখ মানুষের ম্যালেরিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ১০ হাজার ৫২৩ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি সমন্বিত প্রচেষ্টায় গত ২০০৮ সালের তুলনায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শতকরা ৮৮ ভাগ এবং মৃতু্যর হার প্রায় ৯৫ ভাগ কমাতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে এবারই প্রথমবারের মতো দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালন করা হবে। দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচিসহ ও ব্র্যাকের সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটির্ যালি গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে সিরডাপ মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হবে। পরে একই মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ক্যাম্প, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।