এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে 'পেসমেকার' বসানো হয়েছে।
জানা গেছে, মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম 'পেসমেকার' বসানোর কার্যক্রম শুরু করে সন্ধ্যা ৭টায় তা বসানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, ম্যাডামের হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে বস্নক ছিল, একটা স্টেনটিংও করা ছিল। সব কিছু পর্যালোচনা করে মেডিকেলে বোর্ড ম্যাডামের হার্টে স্থায়ী পেসমেকার লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চিকিৎসকরা জানান, পেসমেকার হৃদযন্ত্রের নিয়মিত ছন্দে চলতে সাহায্য করে। যখন হৃদযন্ত্রের স্পন্দন ঠিকমতো চলছে কিনা সেটাও এই যন্ত্র তদারকি করে। হৃৎপিন্ডের ডান অ্যাট্রিয়াম প্রাচীরে উপর দিকে অবস্থিত বিশেষায়িত কার্ডিয়াক পেশিগুচ্ছে গঠিত ও স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে নিয়ন্ত্রিত একটি ছোট অংশ যা বৈদু্যতিক তরঙ্গ প্রবাহ ছড়িয়ে দিয়ে হৃৎস্পন্দন সৃষ্টি করে এবং স্পন্দনের ছন্দময় তা বজায় রাখে এই পেসমেকার।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, ম্যাডামের হৃদরোগের
\হসমস্যা আগে থেকেই ছিল। গত শুক্রবার গভীর রাতে খালেদা জিয়ার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। রক্ত চলাচল সঠিকভাবে সঞ্চালন করতে পারেনি। এজন্য তাকে দ্রম্নত গভীর রাতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এছাড়া খালেদা জিয়ার অন্য সমস্যাগুলোও প্রকট আকার ধারণ করে। পুরো চেকআপ এবং সবকিছু পর্যালোচনা করে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে পেসমেকার বসানো হয়েছে।
ওই চিকৎসক জানান, এবারই প্রথম খালেদা জিয়া একটু নার্ভাস ছিলেন। শারীরিকভাবেও বেশ দুর্বল তিনি। তবে সফলভাবে তার পেসমেকার বসানো হয়েছে। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তাকে সিসিইউতে ৭২ ঘণ্টার পর্যাবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। এজন্য স্পর্শকাতর এই বিষয়ে চিকিৎসক ছাড়া দলের কোনো নেতা কোনো তথ্য দিতে চাচ্ছেন না।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা খুব বেশি ভালো না। গত দুই দিনে ম্যাডামের সঙ্গে চিকিৎসকরা ছাড়া দলের কোনো নেতা দেখা করতে পারেননি। সাধারণত আগে দলের মহাসচিব ম্যাডামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারতেন। এবার তিনিও ম্যাডামকে দেখতে পারেননি। মেডিকেল বোর্ড চিকিৎসার বিষয়ে নানারকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হচ্ছে।
জানা গেছে, মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক-নার্স ছাড়া খালেদা জিয়ার কক্ষে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দলীয় প্রধানের কাছে যেতে না পারলেও তাকে দেখতে শনিবারের মতো রোববারেও সকাল থেকে হাসপাতালে নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। অন্যদিকে ঢাকাসহ সকল মহানগর ও জেলায় দলীয় প্রধানের রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ ও বিশেষ দোয়া আয়োজন করে বিএনপি।
সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলে দলের মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, সরকার প্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ম্যাডামের অসুখের চিকিৎসা বাংলাদেশে করা সম্ভব নয়। তার যে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপস্ন্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন। বার বার একথাগুলো বিভিন্নভাবে বলার পরেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। অবরুদ্ধ অবস্থায় কারাগারে থেকেই অসুস্থ হয়েছেন। সেখানে কোনো চিকিৎসা হয়নি। বার বার কমপেস্নইন করেছেন কিন্তু সরকার তা শুনেনি, তার চিকিৎসাও দেয়নি। পরবর্তীকালে তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে সেখানেও তার কোনো সুচিকিসা হয়নি। বাসায় আসার পরে তাকে শর্ত দেওয়া হয়েছে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা 'আশঙ্কাজনক' উলেস্নখ করে আবেগ আপস্নুত কণ্ঠে মহাসচিব বলেন, তার জীবন মৃতু্য এতই সন্ধিক্ষণে যে, আপনারা প্রাণখুলে তার জন্য দোয়া করুন।
দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাসহ কয়েকশ' কর্মী-সমর্থক অংশ নেন।
৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, আর্থাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। হঠাৎ অসুস্থতার কারণে শুক্রবার গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তির পর থেকে কয়েক দফা মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হৃদপিন্ডে পেসমেকার লাগানোর সিদ্ধান্ত দেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিনসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কয়েক দফা বৈঠকে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন।
মেডিকেল বোর্ডের এসব সভায় লন্ডন থেকে ডা. জোবায়েদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকেন।