পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ভেঙে যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট-পিরোজপুর-সোনারহাট সড়ক। ছবিটি রোববার তোলা -ফোকাস বাংলা
কয়েকদিন বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। তবে এসব এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। পানি নেমে যাওয়ায় জেগে উঠছে ক্ষত। ছড়াচ্ছে পচা দুর্গন্ধ। এদিকে তিস্তার চোখরাঙানি কিছুটা কমলেও আতঙ্ক বাড়াচ্ছে যমুনা নদী। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে পাড় ভাঙছে এই নদীর। গাইবান্ধায় কমেছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি, তবে বেড়েছে ঘাঘট ও করতোয়ায়। কুড়িগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এখানে পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটার পূর্বাভাস রয়েছে।
সিলেটের বিশ্বনাথের বাইশঘর (উত্তরপাড়া) গ্রামে শনিবার দুপুরে ওয়াহিদ মিয়া নামে সাড়ে তিন বছর বয়সি এক শিশুর মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বানের স্রোতে ভেসে ও পানিতে ডুবে সাতজনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেল।
ধীরে কমছে হাওড়ের পানি : সিলেট অফিস জানায়, টানা রোদ থাকায় সুরমা নদীসহ সব নদ-নদীর পানি দ্রম্নত কমছে। এতে নগরী থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। নগরীর রাস্তাঘাটে জমে আছে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা পলিমাটির স্তর। সড়কগুলোতে ক্ষত জেগে উঠেছে। নগরীর তালতলাসহ বেশ কিছু পয়েন্টে পানি কমায় স্বাভাবিক হচ্ছে যানচলাচল। বন্যার পর নগরীর ছড়া পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করতে পরিদর্শন করেছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এদিকে, ধীরে কমছে সিলেটের উপজেলার নিম্নাঞ্চলের পানি। কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় এখনো বাড়িঘরের চারপাশে থৈ থৈ পানি। সড়কগুলো এখনো পানির নিচে। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা মানুষের ভরসা। বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে বন্যা এলাকায়।
\হচুলা নষ্ট হওয়ায় তীব্র খাবার সংকট আছে। অনেকের ঘরবাড়ি পানির টানে ভেঙে গেছে।
সিলেটের হাওড়গুলোর পানি ধীরে কমছে। সিলেটের সীমান্ত নদীগুলো উঁচু নীচু হওয়ায় পানি নামতে একটু সময় লাগছে। তবে, টানা রোদ থাকলে পানি কমে যাবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়নের কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন দাশ।
এদিকে, বন্যাদুর্গত গোয়াইনঘাট উপজেলায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ ও চিকিৎসাসেবা দিয়েছের্ যাব-৯। এসময় উপস্থিত ছিলেন উইং কমান্ডার অধিনায়ক মো মোমিনুল হক। কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক (অপারেশনস্) মো. ফখরুল আলম।
সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, হাওড়পারের মানুষের মাঝে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছে মেডিকেল টিম। হাওড়ের পানি একটু ধীরে কমছে, যে কারণে নিম্নাঞ্চলের পানি কমতে সময় বেশি লাগছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, 'সিলেট নগরীর ছড়াগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। বন্যার কবল থেকে সিলেট রক্ষা করতে যা-যা করা দরকার আমরা করব। আমার কাজে সহযোগিতা করছেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ছড়া উদ্ধারে সুরমা নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।'
কুড়িগ্রামে 'সাময়িক' উন্নতি
কুড়িগ্রামে তিন দিন বৃষ্টি হয়নি। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পরিমাণও কমছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি কমেছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তার পানি আরও কমবে। তবে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এতে পানি আবার বাড়তে পারে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, 'বন্যা নিয়ে আশঙ্কা আপাতত কেটে গেছে। তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী আবারও পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।' রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান এই পানি প্রকৌশলী।
ভাঙন প্রশ্নে এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, 'তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপত্র অববাহিকায় ১৪ থেকে ১৫টি স্থানে ভাঙন চলছে। অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিরক্ষামূলক কাজ চলমান রয়েছে।'
এদিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার পানি ও ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমেছে। এতে পস্নাবিত হওয়া নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর পানি এবং গাইবান্ধা শহরের পাশে ঘাঘট নদের পানি বাড়ছে। গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে করতোয়া ও ঘাঘটের পানি বাড়ছে। তবে কমছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি।
আতঙ্ক বাড়াচ্ছে যমুনা
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি গত কয়েকদিনে আরও বেড়েছে। এখনো পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীর সমতলে। এতে নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলে পাট ও তিলের মাঠ। যমুনায় ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরেও যমুনায় পানি বাড়ছে, তীব্র হচ্ছে ভাঙন।