দেশজুড়ে গ্যাস সংকট চরমে

গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআর থেকে নেমেছে ২ পিএসআরএ, দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে নিটিং ও ডায়িং মেশিন, শিল্প খাতে বেকার ২০ শতাংশ কর্মী

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
মে মাসে শুরু হওয়া গ্যাস সংকট এখনো অব্যাহত রয়েছে। ঈদের পর বিশেষ করে শিল্প-কারখানাগুলোতে সরবরাহ নেমেছে চাহিদার ২০ শতাংশে। গ্যাসের লাইনগুলোতে যেখানে ১৫ পিএসআর গ্যাসের চাপ থাকার কথা সেখানে গ্যাসের চাপ রয়েছে ২ থেকে ৩ পিএসআরএ। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন। একই অবস্থা বিদু্যতে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাসের সরবরাহ করা সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় বন্ধ ডজনখানেক বিদু্যৎ কেন্দ্র। এদিকে শিল্পে গ্যাস না পাওয়ায় বিপর্যস্ত রপ্তানিমুখী পোশাক খাত। দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে ডায়িং ও নিটিং মিলগুলো। যা গ্যাস মিলছে তা দিয়ে কোনোমতে ফিনিশিং কারখানাগুলো চালু রেখে অর্ডারকৃত পোশাকগুলো তৈরি করা হচ্ছে। গ্যাসের সমাধান চেয়ে দফায় দফায় সরকারি সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। তাই উৎপাদন চালু রাখতে এলপিজি ও সিএনজি সিলিন্ডার দিয়ে কোনো মতে কাজ সারছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু তিতাসের হস্তক্ষেপে তাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দিনে ৩ হাজার ৮শ' মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ রয়েছে ২ হাজার ৫শ' মিলিয়ন ঘনফুটের আশপাশে। যার মধ্যে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ আসে আমদানিকৃত এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) থেকে। কিন্তু গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত টার্মিনালটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। ফলে চলমান গ্যাস সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার অপারেশন এন্ড মাইনিং বিভাগের প্রধান কামরুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, 'এমনিতে দেশে গ্যাসের সংকট রয়েছে। তবে টার্মিনাল একটি বন্ধ থাকায় এই সংকট আরও বেড়েছে। দিনে অন্তত ৪শ' মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে টার্মিনাল মেরামতের কাজ শেষ হয়ে যাবে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে'। এদিকে গত দুই বছর ধরে স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতির দিকে রয়েছে। ফলে চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাসের ঘাটতি এমনিতে রয়েছে। এ অবস্থায় আমদানিকৃত এলএনজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিপাকে শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা। শুধু তাই নয়, গ্যাসের অভাবে কাঙ্ক্ষিত বিদু্যৎ উৎপাদন না হওয়ায় ঢাকার বাইরে নিয়মিত বিরতিতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিদু্যৎ বিভাগকে। এতে বিদু্যৎ নির্ভর স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোর উৎপাদনও স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফাকচার এন্ড এক্সপোর্টার আসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি ও শিল্প উদ্যোক্তা মোহাম্মাদ হাতেম যায়াযায়দিনকে বলেন, শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ যে অবস্থায় এসেছে এতে কোনো শিল্প টিকে থাকতে পারে না। আমরা চড়া দাম দিয়ে হলেও গ্যাসের সরবরাহ চেয়ে দফায় দফায় সরকারের সবগুলো মহলে চিঠি দিয়েছে কিন্ত কোনো সমাধান পাইনি। উল্টো গ্যাসের সরবরাহ প্রতিনিয়ত কমছে। ১৫ পিএসআর অনুমোদিত গ্যাস লাইনে ঈদের আগে ৬-৭ পিএসআর গ্যাসের চাপ থাকলেও তা এখন কমে ২-৩ নেমেছে। তাই বাধ্য হয়ে এলপিজি ও সিএনজি সিলিন্ডার ব্যবহার করছি। এতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিদেশিদের অর্ডারগুলো যথাসময়ে দেওয়ার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। এই শিল্পোদ্যোক্তা অভিযোগ করে বলেন, তিতাস আমাদের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দিতে পারছে না উল্টো গ্যাস স্টেশন থেকে যেন সিলিন্ডারে করে গ্যাস আনতে না পারি তা বন্ধের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কারখানা থেকে গ্যাস আনতে গেলে সেখানে বাধা দেওয়া হয়েছে। এভাবে বিকল্প জ্বালানি পথও বন্ধ শিল্পের জন্য বন্ধ করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এদিকে শিল্পে গ্যাস না থাকায় 'হেভি ইউনিট' দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে ফলে পোশাকখাতে অন্তত ২০ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তাহলে উদ্যোক্তারা শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হবেন বলে জানান এই শিল্প উদ্যোক্তা। \হ \হ