প্রধানমন্ত্রী চীনে যেতে পারেন জুলাই মাসের প্রথমার্ধে
প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে চীন সফরে যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ওই সফর উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। আর শেখ হাসিনার সফরের জন্য চীন প্রতীক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও।
সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশে সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। এর আগে তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, 'আগামী ৮-১১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করবেন বলে আশা করছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক ক্ষেত্রে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সামনে প্রধানমন্ত্রীর সফরে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে সেটি আমরা প্রত্যাশা করেছি। আমরা এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছি।'
চীনা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে হাছান মাহমুদ জানান, 'চীন আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং বড় বাণিজ্য সহযোগী। আমরা বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চীন থেকে ইমপোর্ট করি প্রায় ১৩ বিলিয়ন। আর এক্সপোর্ট করি পৌনে এক বিলিয়ন।'
রোহিঙ্গা ইসু্যতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে
মন্ত্রী বলেন, 'বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ব্যাপারে আমরা বলেছি, ওষুধ, চামড়া ও সিরামিক পণ্যগুলো তারা আমাদের থেকে নিতে পারে।'
আমাদের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল চীন সফরে যাচ্ছে বলেও জানান ড. হাছান।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চেয়েছি। আমরা গাজা ইসু্য নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে চীনকে আমরা অ্যাকটিভ রোল পেস্ন করার প্রত্যাশা করি।'
যেকোনো ফরমেটে বাংলাদেশকে ব্রিকসে যুক্ত হতে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে উলেস্নখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, 'যেকোনো ফরমেটে ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হয় সেটা মেম্বার কান্ট্রি বা পার্টনার কান্ট্রি, যেটাই হোক। সেটা নিয়ে তাদের সমর্থন চেয়েছি।'
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'চীনের বিনিয়োগ যেন বাংলাদেশে আরও আসে সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। চীনা মন্ত্রী আমাদের দেশে আরও বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।'
তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এটা নিয়ে আজকে আলোচনা হয়নি। উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করবে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, 'আমাদের দলের জুনিয়র নেতারা চীন সফর করেছেন। দলের সিনিয়র সদস্যরা যাবেন, সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। দুই দেশের দলের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি।'
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মিনিস্টার লিউ জিয়ানচাও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের জন্য প্রতীক্ষায় রয়েছে চীন। এ সফর সফল করার জন্য উভয়পক্ষ এখন কাজ করছে।
বৈঠক শেষে লিউ জিয়ানচাও সাংবাদিকদের বলেন, 'বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ৫০ বছরের গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা দুই দেশই আরও গভীর সম্পৃক্ততা চাই।'
চীনা মিনিস্টার বলেন, 'আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করবেন। এ সফরের জন্য আমরা প্রতীক্ষা করছি। সফর সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও চীনা পক্ষ একযোগে কাজ করছে।'
লিউ জিয়ানচাও বলেন, 'অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ইত্যাদি খাতে দুই দেশই সহযোগিতা বাড়াতে চায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরে এসব বিষয়ে ফল আসবে।'
সফরকালে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলেও আশা করেন তিনি। মিনিস্টার বলেন, 'চীন বন্ধু ও উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে।'
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'চীন রোহিঙ্গা ইসু্যতে ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। আমরা এ সংকটের সমাধান চাই।'
চীনা মন্ত্রী জানান, 'আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চায়। সে লক্ষ্যে আমরা নানা উদ্যোগও নিয়েছি।'
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর সামনে রেখে ২২ জুন চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাওয়ের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইতালির পররাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাৎ
এদিকে, ইতালির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মহাসচিব (পররাষ্ট্রস?চিব) রিকার্ডো গুয়ারিগলিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমু?দের স?ঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণাল?য়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্ত?রে এ সাক্ষাৎ অনু?ষ্ঠিত হয়।
সাক্ষা?তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম পশ্চিম ইউরোপের দেশ হিসেবে ইতালির ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির দ্বিতীয় রাজনৈতিক পরামর্শক সভার কো-চেয়ার হিসেবে যোগ দিতে আসা ইতালির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মহাসচিব রিকার্ডো গুয়ারিগলিয়াকে স্বাগত জানান।
'বিশেষ মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত'
এদিকে, সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কর্তৃক আয়োজিত আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'একটি বিশেষ মহল সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই বিশেষ মহলের সঙ্গে দু-একটি গণমাধ্যমও যুক্ত। দেশে দুর্নীতি হলে সেটি অবশ্যই সংবাদে আসবে। আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ পরিবেশন হলে বুঝতে হবে এটি ষড়যন্ত্রের অংশ।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'তদন্তের আগে গণমাধ্যমের সামনে কাউকে দুর্নীতিবাজ বলাও সমীচীন নয়। অবশ্যই দুর্নীতির সংবাদ আসবে এবং সেটি দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। কোনো নিরপরাধ মানুষ যাতে ভিকটিম না হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবে যেন কোনো সংবাদ পরিবেশন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।'
তিনি বলেন, 'গত নির্বাচনের আগে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। প্রথমে নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্র বানচাল হওয়ার পর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল সরকার যেন বিশ্ব দরবারে সমাদৃত না হয়। ৮০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এরপর বিএনপির বেলুন শেষ হয়ে গিয়েছে।'
হাছান মাহমুদ বলেন, 'কয়েকদিন আগে পত্রিকায় একটি শিরোনাম দেখলাম 'মহাসচিবের খোঁজে বিএনপি' একটি দলে আট থেকে নয় বছর কোন সম্মেলন হয় না। আবার দেখলাম কয়েক ডজন কোনো সম্মেলন ছাড়াই তারা পূরণ করে দিয়েছে। মার্শাল ল' অ্যাডমিনিস্ট্রেটররা যেভাবে কলমের খোঁচায় কাউকে বরখাস্ত করতো এবং দলে অন্তর্ভুক্ত করতো ঠিক একই কায়দায় দেশের অভ্যন্তরে নয় দেশের বাইরে থেকে কে কোন পদ পাবে সেটি তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঠিক করে দিচ্ছে। যাদের নিজেদের দলেই কোনো গণতন্ত্র নেই। তারা আবার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে।'
তিনি বলেন, 'মহাসচিবের খোঁজে বিএনপি' পত্রিকায় এই শিরোনাম দেখার দুই দিন পর দেখলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাঁদছেন। পত্রিকায় এসেছে খালেদা জিয়া অসুস্থ বিধায় তিনি কেঁদেছেন। খালেদা জিয়ার তো বহুদিন ধরে অসুস্থ। এতদিন তো কান্না দেখিনি। শিরোনামে মহাসচিব খোঁজার সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্নার ছবি দুইটার মধ্যে সংযোগ আছে কি না এটা খুঁজে দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগের থেকে তাদের শেখার আছে। আওয়ামী লীগের প্রতি তিন বছর অন্তর সম্মেলন হয়। কলমের খোঁচায় আওয়ামী লীগ থেকে কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হয় না, দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শেখ হাসিনাকে সমস্ত ক্ষমতা প্রদান করা হলেও তিনি সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. অরুপ রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি মোবারক আলী শিকদারসহ আরও অনেকে।