আয়কর দিলেও জাকাত প্রদান করতে হবে

প্রকাশ | ১৩ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করেন। তখন থেকে সেখানে যাকাত ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফে যাকাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিশ্চয়ই সদকাহ্‌ (যাকাত) হলো- ফকীর, মিসকীন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, আলস্নাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য-এটা আলস্নাহর বিধান। আলস্নাহ্‌ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ্‌ ৯:৬০)। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, 'এটা (যাকাত) প্রাপ্য সেসব অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আলস্নাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত থাকায় জীবিকার জন্য জমিনে পদচারণা করতে পারে না এবং (আত্মসম্ভ্রমের কারণে) কারো নিকট হাত পাতে না বলে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তোমরা তাদের (দারিদ্র্যের) লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের নিকট মিনতি করে যাচনা করে না। আর যে কল্যাণকর কিছু তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয় আলস্নাহ তা সবশেষ অবহিত।' 'সে সব লোক, যাদেরকে ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আলস্নাহর স্মরণ, সলাত কায়িম এবং যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।' (সূরাহ নূর ২৪:৩৭) আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব দান করি, তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে, আর সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তই আলস্নাহর ইচ্ছাধীন। (সূরাহ হাজ্জ ২২: ৪১)। এভাবে পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে যাকাত প্রদানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তবে বিশ্বের যেসব রাষ্ট্রে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু নেই, সেখানে যাকাতের পাশাপাশি আয়করও পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আয়কর দিলে যাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে ইসলামী চিন্তাবিদদের ভাষ্য, আয়করের সঙ্গে যাকাতের কোনো সম্পর্ক নেই। এ দুটি সম্পূর্ণ পৃথক খাত এবং এর হিসাবের ছকও পুরোপুরি ভিন্ন। মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দি বলেন, আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স) দিলে তা যাকাত থেকে বাদ যাবে না। (শামী ৩/২৫৫, তাতারখানীয়া ৩/২২৫, দারুল উলুম ৬/১৪৭) তেমনিভাবে যাকাত দিলে তা আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স) থেকে বাদ যাবে না। কারণ শরিয়তের দৃষ্টিতে আয়কর কতটা যৌক্তিক; এনিয়ে মুফতিদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও আয়কর দেয়া মুসলিম অমুসলিম সকল নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পক্ষান্তরে যাকাত মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আয়কর হয় আয় করলে। আর যাকাত হয় বছর শেষে উদ্বৃত্ত থাকলে। সুতরাং একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আয়কর দিলেও যাকাত দিতে হবে। তার ভাষ্য, 'আয়কর হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেকু্যলার ট্যাক্স। কিন্তু যাকাত হচ্ছে রিলিজিয়াস (ধর্মীয়) ট্যাক্স। আলস্নাহর সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারটা প্রধান্য দিতে হলে তাকে যাকাত দিতেই হবে।' তিনি উলেস্নখ করেন, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা থাকলে আয়কর দিতে হতো না। যাকাত আয়করের বিকল্প হতো। অধ্যাপক ইব্রাহিম বর্ণনা করেন, সম্পদের 'শুদ্ধতার' জন্য যাকাত দেয়া অপরিহার্য। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনার চিন্তা থেকে ইসলামে যাকাত ব্যবস্থা চালু হয়েছে বলে তিনি উলেস্নখ করেন। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, আয়কর এবং যাকাত- দুটোই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা। তবে পার্থক্য হচ্ছে, যাকাতের ক্ষেত্রে ইসলামী রাষ্ট্র হতে হবে এবং আয়করের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়ার বাধ্যবাধকতার কোনো বিষয় নেই। আয়কর দিতে হয় মোট আয়ের উপর এবং যাকাত দিতে হয় মোট আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় ইসলামী চিন্তাবিদ ড. শমসের আলী বলছেন, আয়কর দিলেও যাকাত দিতে হবে। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্র যদি আদর্শ ইসলামিক রাষ্ট্র হয় তাহলে আয়কর এবং যাকাত- এ দুটো এক সাথে দেবার প্রয়োজন হতো না। তখন শুধু যাকাত দিলেই হতো। ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, গত দেড় হাজার বছরে পৃথিবীতে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাতের মূল দর্শন পরিবর্তন হয়নি। সে ক্ষেত্রে বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয়কর এবং ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাত- এ দুটো ভিন্ন বিষয় হিসেবেই থাকছে।