রাজনৈতিক চাপ না থাকায় স্বস্তিতে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজপথের বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং জোটের কোনো ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি না থাকায় সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের তৎপরতা না থাকায় অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির ও দলটির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নিবাচনের দাবি এবং আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণাও দেয়া হয়। যদিও পরে তাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি লক্ষ করা যায়নি। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেও এ জোট থেকে বিএনপি ও গণফোরামের নির্বাচিত আটজন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র একজন (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) ছাড়া সবাই শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অভ্যন্তরীণ সংকটও তৈরি হয়েছে। ২০ দল থেকে শরিকদলগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও ভাঙনের মুখে। এদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জোটের এ সংকট সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক হয়েছে। জোটের শরিক দলগুলো আদর্শ ও নীতিহীন রাজনীতির কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। নীতি আদর্শহীন রাজনীতির কারণে বিরোধী জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে কোনো আন্দোলনের হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার ও আওয়ামী লীগ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জোট ছাড়ার আলটিমেটাম দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সঠিক পথে চলছে না বলে ওই দলটির অভিযোগ। প্রথমে কাদের সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলন করে এ আলটিমেটাম দেন। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে চিঠি দিয়ে এ আলটিমেটামের বিষয়ে জানানো হয়েছে। এ জাতীয় ঐক্যফন্টের প্রধান শরিক দল হচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে আন্দালিভ রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। বিএনপি এবং ঐক্যফন্টের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে বিজেপি গত ৬ মে ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। গত নির্বাচনের আগে ২০ দল থেকে বেরিয়ে যায় বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়েও বিএনপির মধ্যে মতোবিরোধ রয়েছে। আবার ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরামের মধ্যেও নেতাদের মতবিরোধী চলছে। গণফোরাম আবারও ভাঙতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট উভয় জোটেই অভ্যন্তরীণ সংকট তীব্র হচ্ছে। নির্বাচনের পর সরকারিবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার কথা জোটের নেতাদের বলতে শোনা গেলেও বর্তমানে জোট ও দলগুলো অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট নামে সরকারবিরোধী অপর জোট গত নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। এ জোটের পক্ষ থেকেও নতুন নির্বাচনসহ বেশকিছু দাবি জানানো হয়। তবে চলমান ইসু্যভিত্তিক কিছু কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকলেও এ জোটও সরকারেরবিরোধী কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সরকারবিরোধী আন্দোলন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আদর্শহীন কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট বেশি দিন টিকে থাকার কথা না। বিএনপি একটি আদর্শহীন দল, বিএনপি যে জোটে আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, সেটিও আদর্শহীন জোট। এ জোট ভাঙবে, জোট থেকে দলগুলো বেরিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। বিএনপি এবং তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলোর মধ্যে একটা হতাশা বিরাজ করছে। বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান একজন দন্ডপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি। সেই ব্যক্তিকে দিয়ে বিএনপি বা জোট পরিচালিত হবে এটাই তো একটা হাস্যকর, লজ্জাজনক ব্যাপার। যাদের মধ্যে নূ্যনতম বিবেক, রাজনৈতিক চেতনা রয়েছে তারা জোট থেকে বেরিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। বিএনপি বহুবার আন্দোলনের কথা বলেছে, হুমকি দিয়েছে। এটা নিয়ে এখন আর আমাদের মাথাব্যথা নেই। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আসলে ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি হচ্ছে নীতিহীন রাজনীতির ঐক্য। যখন ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয় তখনই আমরা বলেছিলাম নীতিহীন রাজনীতির এ ঐক্যের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এ ঐক্য টিকবে না এবং সেটাই হয়েছে। নীতিহীন, আদর্শহীন কোনো রাজনীতি গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না।