৩৫ বছর পর জাবিতে শিবিরের আত্মপ্রকাশ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে সব দলের অংশগ্রহণে সুস্থধারার রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত এবং জাকসু সচলসহ ক্যাম্পাসে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এতে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর জাবিতে প্রকাশ্যে এলো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। মঙ্গলবার রাত ১১টায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক আব্দুলস্নাহ আল মামুন সাকী স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি ও সেক্রেটারি মহিবুর রহমান মুহিব এ দাবি জানান।
যৌথ বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সুস্থধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ছাত্রশিবির সর্বদা প্রস্তুত। আবাসিক হলগুলোয় কোনো ধরনের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, মাদকের বিস্তার রোধে ছাত্রশিবির অঙ্গীকারবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আনয়ন, গবেষণামুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়ন, সুস্থধারার সংস্কৃতির বিকাশ ও নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ছাত্রশিবির কাজ করে যাবে। ছাত্রশিবির চায় ছাত্র সংসদকেন্দ্রিক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসুক।
বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এ বয়ানের কোনো সত্যতা নেই। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা এলেও এরকম কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। বরং সভার সিদ্ধান্ত ছিল 'বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়।' কোনো মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না। ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধকরণ ও ট্যাগিং রাজনীতি মূলত ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহায়ক শক্তি হিসেবেই কাজ করেছে।
প্রসঙ্গত, হারুনুর রশিদ রাফি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের (৪৬ ব্যাচে) শিক্ষার্থী এবং মহিবুর রহমান মুহিব বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ (৪৭ ব্যাচ) সেশনের শিক্ষার্থী এবং আব্দুলস্নাহ আল মামুন সাকী দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ (৪৭ ব্যাচ) সেশনের শিক্ষার্থী।
প্রতিবাদে বিক্ষোভ
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরকে অবাঞ্ছিত দাবি করে তাদের আত্মপ্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ-মিছিলটি বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তামিম স্রোতের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
এই ভূখন্ডে 'মুসলিম' শব্দ মুছে দেওয়ার অন্যতম
ভিকটিম জাবি: শিবির সেক্রেটারি
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, এই ভূখন্ডে বিভিন্ন নাম থেকে ?'ইসলাম' ও 'মুসলিম' শব্দ মুছে দেওয়ার অন্যতম ভিকটিম- 'জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়'।
বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে মন্তব্য করেন শিবির সেক্রেটারি।
মন্তব্যের ঘরেই, অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আগের নামে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন।
ইতিহাস বলছে, রাজধানীর অদূরে সাভারে অবস্থিত গবেষণাধর্মী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরের পূর্ব নাম ছিল 'জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়'।
১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার পূর্ব নাম জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে মিলিয়ে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে।
এটিই ছিল দেশের প্রথম ও একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস হলে ?'মুসলিম' শব্দ বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হয়।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ বছর পর প্রকাশ্যে এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সংগঠন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় এক বিবৃতিতে বলা হয় ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ ওরফে রাফি ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান ওরফে মুহিব।
এদিন সব দলের অংশগ্রহণে সুস্থধারার রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সুস্থধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ছাত্রশিবির সর্বদা প্রস্তুত। আবাসিক হলগুলোয় কোনো ধরনের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, মাদকের বিস্তার রোধে ছাত্রশিবির অঙ্গীকারবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আনয়ন, গবেষণামুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়ন, সুস্থধারার সংস্কৃতির বিকাশ ও নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ছাত্রশিবির কাজ করে যাবে। ছাত্রশিবির চায় ছাত্র সংসদকেন্দ্রিক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসুক।