রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরে বৃহস্পতিবার সকালে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় -ফোকাস বাংলা
রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় তারা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ও পুলিশের একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কচুক্ষেত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ দুইজন হলেন- ঝুমা আক্তার (১৫) ও আলামিন (১৭)। এর মধ্যে আলামিন সেনটেক্স ফ্যাশন গার্মেন্টসের কর্মী। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন- বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কচুক্ষেত এলাকার ডায়নাসহ কয়েকটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেন। তারা মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে সেনানিবাসমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। তাদেরকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে বেলা পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ
সদস্যদের বহনকারী একটি ট্রাক এবং সেনাবাহিনীর একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা। ফায়ার সার্ভিসেরকর্মীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর আব্দুস সামাদ আজাদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে তারা আগুনের খবর পান। সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি এবং পুলিশের একটি ট্রাকে আগুনের খবর পেয়ে দুটি ইউনিট পাঠানো হয়। আগুন নির্বাপণ করা হয়েছে।'
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ঝুমা আক্তার ও আলামিনকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সেখানকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, 'ঝুমার ডান পায়ে এবং আলামিনের কাঁধে গুলি লেগেছে। আহত দুইজনের মধ্যে ঝুমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ও আলামিন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।'
আলামিনের বাবা আব্দুর রহমান বলেন, 'আলামিন সেনটেক্স ফ্যাশন গার্মেন্টসের কর্মী। সকাল ৯টার দিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে ওদের কারখানায় আন্দোলন শুরু হয়। এ অবস্থা দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ছুটি দিয়ে দেন। পরে তারা গার্মেন্টস থেকে বের হয়ে আসলে আন্দোলনের মধ্যে পড়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়।'
ভাষানটেক থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই রাস্তায় ছিলাম। গার্মেন্টস শ্রমিকরা হঠাৎ করে তাদের আন্দোলন থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।'
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাকসুদুর রহমান বলেন, 'কয়েকটি গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তারা রাস্তায় নেমে আসে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়ে। এই অবস্থায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও শক্তি প্রয়োগ করে। এই গাড়ি দুটি এখানেই ছিল, যতদূর জেনেছি আমরা- শ্রমিকরাই আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলে ছেড়ে দেওয়া হবে।'
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ১৪ নম্বর থেকে সেনানিবাসমুখী সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দুটি রেকার এসে পুড়ে যাওয়া গাড়ি দুটি সরিয়ে নেয়।