খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে করা একটি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা এক আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুল চূড়ান্ত (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে এ রায় দেন।
এ নিয়ে একদিনের ব্যবধানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা ১২টি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে বাতিল হলো।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আবদুস সালামের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা বাতিল ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। এ মামলার আরও দুইজন হলেন একুশে টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক মাহাথীর ফারুকী খান ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কনক সারওয়ার।
এদিন মামলা বাতিলে জারি করা রুল মঞ্জুর করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আব্দুস সালামের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. শাহদীন মালিক ও মো. তায়ি্যব-উল-ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার। আদালতে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
ঘোষিত রায়ে আদালত বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়া হলেও কোনো 'কমপেইন' মামলা করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে মামলা দায়ের ও কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া আইনসম্মত নয়, যে কারণে মামলাটি বাতিলযোগ্য।
মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, আজকে (বৃহস্পতিবার) একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান পক্ষে ড. শাহদীন মালিক শুনানি করেছেন। আমরাও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। এই মামলার শুরুটাই ছিল বেআইনি। যার ফলে আব্দুস সালাম ও তারেক রহমানসহ সবার মামলা বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি লন্ডন থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্য একুশে টিভি সরাসরি সম্প্রচার করে। পরদিন তারেক রহমান ও একুশে টেলিভিশনের মালিক আব্দুস সালামের নামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চায় তেজগাঁও থানা পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর তেজগাঁও থানার এসআই বোরহান উদ্দিন ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি এ মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এমদাদুল হক। সেখানে তারেক ও সালামের সঙ্গে একুশে টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক মাহাথীর ফারুকী খান এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কনক সারওয়ারের নাম যোগ করা হয়। পরে আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আব্দুস সালাম হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট ২০১৭ সালে রুল ও স্থগিতাদেশ দেন। সেই রুলের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, নাশকতার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ মার্চ রাজধানীর দারুস সালাম থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে পুলিশ। অভিযোগপত্র দাখিলের পর মামলাটির কার্যক্রম বাতিল চেয়ে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ১৬ মে হাইকোর্ট রুল দিয়ে মামলাটির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এই রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কায়সার কামাল। এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মাকসুদ উলস্নাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার। এর আগে গতকাল বুধবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের ১টি, নাশকতার অভিযোগে ১০টিসহ ১১টি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।