যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের ফল বাংলাদেশে প্রভাব ফেলবে না, মত দেবপ্রিয়-বদিউলের

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের গঠন করা অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রকাশ কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। বুধবার সকালে ঢাকার আমেরিকান সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্রের 'ইলেকশন ওয়াচ পার্টি'তে আয়োজনের ফাঁকে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তারা এ কথা বলেন। 'বিভিন্ন কারণে এবারের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ' মত দিয়েও দেবপ্রিয় সাংবাদিকদের বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শুধু একটি দলের উপর নির্ভর করে না।' 'এখানে বহুবিধ কারণ রয়েছে, আমাদের বাণিজ্যিক, কৌশলগত, ভূ-রাজনৈতিকসহ অনেক বিষয় এখানে আছে। শুধু প্রেসিডেন্ট বদল হয়ে গেলেই একদিনে এটা বদল হয়ে যায় না। সুতরাং এই ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি দুশ্চিন্তা নেই।' আলোচনায় ট্রাম্পের সেই বক্তব্য :ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফের হোয়াইট হাউজে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে বাড়তি মনযোগ কেড়েছে ভোটের প্রচার চলাকালে গত ৩১ অক্টোবর মাইক্রোবস্নগিং সাইট এক্স- তার পোস্টকে কেন্দ্র করে। সেই পোস্টে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলেন, 'আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে 'বর্বর সহিংসতার' তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, যারা উচ্ছৃঙ্খল জনতা দ্বারা আক্রমণ ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল।' গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। হিন্দু সম্প্রদায় তখন থেকেই ধারাবাহিক বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগকে 'অতিরঞ্জিত' বলে দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে বক্তব্য দেন তিনি এবং সবাইকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানান ডনাল্ড ট্রাম্প। নিজে ক্ষমতায় থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না বলে দাবি করে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করেন তিনি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'আমার চোখের সামনে কখনোই ঘটত না। সারা বিশ্বে ও আমেরিকায় হিন্দুদের অবহেলা করেছেন কমলা ও জো বাইডেন। 'ইসরায়েল থেকে শুরু করে ইউক্রেন থেকে আমাদের দক্ষিণ সীমান্ত পর্যন্ত তারা একটি বিপর্যয়। কিন্তু আমরা আমেরিকাকে আবার শক্তিশালী করব এবং শক্তিমত্তা দিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনব!' বাংলাদেশ সরকারের তরফে প্রতিক্রিয়া গত ২ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া আসে এ বিষয়ে। ঢাকায় একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আল, বলেন, 'বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ডমেস্টিক পলিটিক্যাল ইসু্য। লবিস্টরা হয়তো এ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে।' পরদিন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সাভারে এক আয়োজনে সাংবাদিকদের বলেন, 'ভোটের ময়দানে অনেকে অনেক কথা বলেন, হয়তো ট্রাম্প ভোট পাওয়ার জন্য এসব কথা বলেছেন।' এ বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'বর্তমান বিশ্বের যে জটিল পরিস্থিতি রয়েছে তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফলাফল আরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখবে বলে মনে করি।' 'আমরা বাংলাদেশের মানুষ বহুদিন 'ভোট দিতে পারিনি' বিভিন্ন কারণে, সেহেতু অন্য দেশের ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের জন্য আমরা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে চাই। 'কীভাবে একটি সাবলীল পরিস্থিতিতে একটি নির্বাচনী প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ, পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কীভাবে এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, যারা দেখভাল করেন তারা কীভাবে আচরণ করেন এবং নির্বাচনের ফলাফল পাওয়ার পরে মানুষ এটাকে কীভাবে গ্রহণ করে- সবগুলো বিষয়েই আমাদের শিক্ষণীয় আছে।' 'ট্রাম্পের টুইট ভারতীয় ভোট পাওয়ার জন্য' নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পের টুইট প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'যদিও ট্রাম্প একটা টুইট করেছেন এবং এটি তার ভোটের বিবেচনায় ভারতীয়দের ভোট পাওয়ার জন্য করেছেন। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ কোথায় সেটাও ট্রাম্প জানে না। আমার মনে হয় না এটার কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে।' যুক্তরাষ্ট্রও বর্তমানে শঙ্কার মধ্যে আছে বলে তিনি বলেন, 'তারাও সংকটের মধ্যে আছে, ভয়াবহ সংকটের মধ্যে আছে। তাদের মধ্যে যে বিভাজন সেটা ভয়ানক। এবার কী হবে সেটা নিয়ে অনেকে শঙ্কিত।' যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকারিতা প্রদর্শন করেছে মন্তব্য করে বদিউল বলেন, 'তাদের পদ্ধতি ও আমাদের পদ্ধতি ভিন্ন। আমাদের পার্লামেন্টারি সিস্টেম দুর্ভাগ্যবশত স্থিতিশীল হয়নি। অনেক টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা গেছি। অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে আমরা গিয়েছি।' খবর বিডি নিউজ