ইজতেমায় মাওলানা সাদের উপস্থিতি নিশ্চিতের দাবি

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার 'দাওয়াত ও তাবলিগের উলামায়েকেরাম ও সাধারণ সাথী' আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা -সংগৃহীত
বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বৈশ্বিক আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির উপস্থিতি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'দাওয়াত ও তাবলিগের উলামায়েকেরাম ও সাধারণ সাথী' আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে কাকরাইল মসজিদের খতিব মুফতি আজিম উদ্দিন বলেন, 'দাওয়াতে তাবলিগ বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ সংগঠন। এ দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে লাখো মানুষ ইসলামের পথে এসেছেন এবং হেদায়েত লাভ করেছেন। বিশ্বব্যাপী এই দাওয়াতি সংগঠনের বাৎসরিক সম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমা প্রায় ৫৭ বছর ধরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি চিহ্নিত মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তথাকথিত জুবায়েরপন্থি তাবলিগের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ দেশের কিছু উলামায়ে কেরামকে বিভ্রান্ত করে ও মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।' তিনি বলেন, 'মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুবায়েরপন্থিদের আয়োজিত প্রোগ্রাম থেকে অসংখ্য অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। অথচ আমরা ৩ নভেম্বর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের আলেমদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি। তবে জুবায়েরপন্থিদের উসকানিতে কিছু অদূরদর্শী আলেম আপসমূলক সমাধানে না এসে তাবলিগ ও বিশ্ব ইজতেমার ইসু্যতে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন এবং পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।' সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, 'এই পরিস্থিতিতে আমরা জাতির সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করার লক্ষ্যে সমাধানমূলক প্রস্তাব পেশ করছি। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দীন মারকাজের অনুসারী তাবলিগ জামাত সম্পর্কে যে অসত্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে সাতটি শর্তের ভিত্তিতে ওপেন চ্যালেঞ্জের প্রস্তাব দিচ্ছি। এই শর্তগুলো হলো- দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানী ও পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীসহ ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমরা বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন; সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন; গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন এবং এটি রেকর্ড ও সরাসরি সম্প্রচার করা হবে; সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; উভয়পক্ষের নির্দিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন; বিতর্কটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে অনুষ্ঠিত হবে এবং বিচারকমন্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।' মুফতি আজিম উদ্দিন বলেন, 'আমরা ঘরোয়া বৈঠকে বসে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই। কিন্তু আগের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে জুবায়েরপন্থিরা অতিরিক্ত উৎসাহ নিয়ে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক করে টানা সাত বছর প্রথম পর্বে ইজতেমার সুযোগ করে নিয়েছে। অথচ তারা বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠককে উপেক্ষা করে রাজপথে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। আগের সরকারের সঙ্গে বসার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি না থাকলেও এই বৈষম্যবিরোধী সরকারের সঙ্গে বসতে আপত্তি কেন?' এ সময় তিনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে; বিগত সাত বছরের বৈষম্য দূর করে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব নিজামুদ্দীন মারকাযের অনুসারী মূলধারার তাবলিগি সাথীদের বুঝিয়ে দিতে হবে; কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বৈষম্য দূর করে তাবলিগের মূলধারার সাথীদের হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে; ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে মূলধারার দুইজন সাথীকে হত্যা ও পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা নিউ মার্কেটে তিনজন সাথীকে হত্যা ও চার শতাধিক সাথীকে আহত করার দায়ে জুবায়েরপন্থিদের নামে দায়ের করা মামলার দ্রম্নত নিষ্পত্তির করতে হবে এবং সারা বাংলাদেশের সব মসজিদে ধর্মীয় উসকানি ও ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত সৃষ্টি হয় এমন বক্তব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন- জামিয়া কাসিফুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সৈয়দ আনোয়ার আব্দুলস্নাহ, শাইখুল হাদিস মুফতি শফিউলস্নাহ, মাওলানা আরিফুর রহমান আরিফ, মুফতি মোয়াজবিন নুর প্রমুখ।