নতুন দুই উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে ছাত্রদের বিক্ষোভ

ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ দাবি

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ 'ফ্যাসিবাদের দোসরদের' অপসারণের দাবিতে সোমবার ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের একাংশ -স্টার মেইল
ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। উপদেষ্টা পরিষদ নতুন করে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে এ সময় তারা অভিযোগ করেছেন, 'সবচেয়ে বড় মশকরা হচ্ছে ছাত্রদের সঙ্গে। ছাত্রদের রক্তের ওপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন হচ্ছে।' অতিদ্রম্নত এই সিদ্ধান্তের নিরসন চান তারা। রোববার বঙ্গবভনে নতুন তিনজন উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। তারা হলেন- ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এদের মধ্যে সেখ বশির উদ্দিন ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা ও প্রতিবাদ করা হচ্ছে। সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুলস্নাহ বলেন, 'সবচেয়ে বড় মশকরা হচ্ছে ছাত্রদের সঙ্গে। ছাত্রদের রক্তের ওপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন হচ্ছে।' অন্তর্র্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে নতুন করে যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাদের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাসনাত আব্দুলস্নাহ বলেন, 'অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বর্তী সরকারকে নিরাপত্তা দিতে শিক্ষার্থীরা বারবার রাস্তায় নামবে না।' বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, 'আমরা আগেই বলেছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলা চাই। বাংলা থেকে ফ্যাসিবাদকে উচ্ছেদ করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের দোসরদেরও উচ্ছেদ করতে হবে। ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে আমরা আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।' এদিন বিকাল থেকেই রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারীরা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টার আসনে এমন মানুষদের বসানো হয়েছে যাদের '২৪-এর আন্দোলনে কোনো মুখ্য ভূমিকা ছিল না। তাদের তাহলে কীসের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে? ছাত্র-জনতা তাদের উপদেষ্টা হিসেবে মানে না।' এ সময় কোনোভাবেই জুলাই বিপস্নবের চেতনা বেহাত হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন তারা। এর আগে এদিন ফেসবুকে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া একটি পোস্টে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহ। এদিকে, 'আওয়ামী সুবিধাভোগীদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে' বিক্ষোভ করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপস্নবী ছাত্র-জনতা। সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের হয়ে তা মৎস্য ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ বলেন, 'ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী সুবিধাভোগীরা ঢুকে যাচ্ছে, একটা গোষ্ঠী উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।' তিনি দাবি করেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। আর সেখ বশির উদ্দিন হত্যা মামলার আসামি। আবু হানিফ বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে, যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা। সরকারের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না, যাতে দেশের মানুষ সরকারের বিপক্ষে রাস্তায় নামে।' নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সভা সঞ্চালনা করেন মুনতাজুল ইসলাম। আব্দুর জাহের, মাহফুজুর রহমান খান, তোফাজ্জল হোসেন, শাকিল উজ্জামান প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন। রাবি ও রুয়েটেও বিক্ষোভ এদিকে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং ছাত্র-জনতার অংশীদারত্ববিহীন উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবি ও রুয়েট। সোমবার বিকাল ৪টায় রাজশাহীর তালাইমারি বিজয় ২৪ চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ থেকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তিনটি দাবি জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ফাহিম রেজা দাবিগুলো পাঠ করেন। দাবিগুলো হলো- এককেন্দ্রিকতা বাদ দিয়ে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এ আন্দোলনের সব অংশীজনকে রাষ্ট্র গঠনে সমানভাবে সুযোগ দিতে হবে; ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়ে উপদেষ্টা নিয়োগের জবাবদিহিতা করতে হবে। অবিলম্বে জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে কোন প্রক্রিয়ায় উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে গণ-অভু্যত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ করবে। সমাবেশে 'উপদেষ্টায় ওরা কারা, জবাব চাই বিপস্নবীরা', 'উত্তর বঙ্গের ১৬ জেলা, চলছে কেন অবহেলা', 'এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র গঠন চলবে না, চলবে না', 'আমার ভাই কবরে, দোসর কেন সরকারে', 'দফা এক দাবি এক, ফারুকীর পদত্যাগ', 'শহীদ ভাইদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে' এসব স্স্নোগানে স্স্নোগানে ছাত্ররা তাদের প্রতিবাদ জানায়। এছাড়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাশেদ রাজন, মিশকাত চৌধুরী মিশু ও মাহের ইসলাম।