উপদেষ্টা সেখ বশির বললেন নিশ্চিত নন

'সেখ বশিরের' বিরুদ্ধে হত্যা মামলা :বাদী বললেন জানেন না

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সেখ বশির উদ্দিন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ নামে (৩০) এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে 'সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া' নামে এক ব্যক্তির। নামটি আংশিকভাবে মিলে যায় রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি সেখ বশিরের বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা 'সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া'র বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, 'সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া' নাম দিয়ে সেখ বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে কি না। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, নামের আংশিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি থাকলেও তিনি নিশ্চিত নন, মামলাটি তার নামে হয়েছে কি না। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, তারা খতিয়ে দেখছে। মামলার বাদী নিহত সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম বলেছেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তার ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। আসামি কারা করেছে, তা তিনি বলতে পারবেন না। কারা নাম দিয়েছে, তাও তিনি বলতে পারবেন না। তিনি তার ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার চান। সোহান হত্যা মামলাটি গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরা থানায় রেকর্ড হয়। মামলার নথিপত্র বলছে, এতে মোট ৫৭ জন আসামির নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে। মামলার ৫৭ জন আসামির মধ্যে ৪৯ নম্বর তালিকায় নাম রয়েছে সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার। পরিচয় হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা। বাবার নাম সেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া। মামলার ৪৮ নম্বরে আসামির নাম উলেস্নখ করা হয়েছে সেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া। পরিচয় হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে, তিনি সাবেক সংসদ সদস্য, যশোর-১। বাবার নাম সেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রয়াত সেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠাতা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি আকিজ। সেখ আকিজের ছেলেদের মধ্যে সেখ আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। সেখ আকিজের সন্তানরা আলাদাভাবে ব্যবসা করেন। সেখ বশির উদ্দিন আকিজ-বশির গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে রোববার শপথ নেন সেখ বশির উদ্দিন। তার পর থেকে মামলার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। মামলার বিষয়টি নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন সেখ বশিরের কাছে। তিনি বলেন, 'আমি খুব ভালো জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ওখানে (মামলার এজাহার) আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সঙ্গতি আছে, কিছু অসঙ্গতি আছে। এটা আসলেই আমি কি না, আমি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনিভাবে মোকাবিলা) করা হবে।' উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্নজনের মন্তব্যের বিষয়ে সেখ বশির বলেন, 'যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়।' যা বলছে থানা-পুলিশ মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি ভারগো গার্মেন্টস কারখানায় মেকানিক্যাল বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরা সিএনজি স্টেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ। মামলায় বলা হয়, সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগসহ অন্যরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচার গুলি চালায়। তখন সোহান শাহসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সোহান শাহকে স্থানীয় ফারাজী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন ওই হাসপাতালের মালিক ইমন ফারাজীর নির্দেশে (মামলার ১৯ নম্বর আসামি) তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। পরে সোহান শাহকে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই গত ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান। মামলার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে সেই মামলা থানায় রেকর্ড করা হয়। মামলায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। সাইফুজ্জামান শিখর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন। তার বাবা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সংসদ সদস্য ছিলেন। সোহান শাহ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া উলেস্নখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল-মামুন ও সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। মামলায় নাম থাকা সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল পুলিশের কাছে। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছেলেকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সুফিয়া বেগম নামে এক নারী ঢাকার আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নির্দেশ দেন। সেই মামলায় সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। ওসি বলেন, সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া বর্তমান মাননীয় উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন কি না, সেটি তারা খতিয়ে দেখছেন। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা বললেন বাদী মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলা সদরের আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ রোডের বাড়িতে গিয়ে আজ সুফিয়া বেগমকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তিনি মামলা করেছেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তার ছেলেকে মেরেছে। সুফিয়া বেগমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মামলার আসামির তালিকা কে ঠিক করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, আসামি কারা হয়েছে, কে করেছে, তা তিনি বলতে পারবেন না। মামলা করার সময় তার সঙ্গে কে কে ছিলেন, তা জানতে চাইলে সুফিয়া বেগম বলেন, তা তিনি জানেন না।