টানটান উত্তেজনা

ভারতের লোকসভা ভোটের বহুল প্রতীক্ষিত ফল ঘোষণা আজ

বুথফেরত জরিপ নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল বিরোধীদের অভিযোগ 'অপ্রয়োজনীয়' জানালেন নরেন্দ্র মোদি ভোট লুট হলে রক্তবন্যা বইয়ে দেয়ার হুশিয়ারি বিরোধীদের

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা নিয়ে সারা ভারতে যখন টানটান উত্তেজনা চলছে; নির্বাচনী ফল-পরবর্তী হানাহানির আশঙ্কায় গোটা ভারত, তখন পাঞ্জাবের অমৃতসরে এক ব্যক্তি মোদি ও রাহুলের ছবি-সংবলিত ঘুড়ি দেখিয়ে সৌহার্দ্যের বার্তা দেন -আউটলুক ইনডিয়া
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের বহুল প্রতীক্ষিত ফল আজ ঘোষণা করা হবে। এরপরই জানা যাবে দিলিস্নর মসনদে কে বসছে, মোদির বিজেপি, না-কি রাহুলের কংগ্রেস। শেষ ধাপের ভোটের পর বুথফেরত জরিপ নিয়ে বিতর্কের পর ৫৪৩ আসনের লোকসভার চূড়ান্ত ফলের প্রত্যাশায় গোটা ভারতের মানুষ। তবে, এরই মধ্যে ভোট-পরবর্তী সহিংসতায় দেশটির পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই কমিশন ভোটার ভেরিফায়েড পেপার ট্রেইল মেশিন বা 'ভিভিপ্যাট' মিলিয়ে দেখার দাবি খারিজ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বুথফেরত জরিপ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তরজায় গতকাল প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস, এবিপি নিউজ এবারের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল ১১ এপ্রিল। গত রোববার শেষ ধাপে ছয় রাজ্যের মোট ৫৯টি আসনে ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে মোট সাত দফার ভোটযুদ্ধ শেষ হয়। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে ইভিএম কারচুপির আতঙ্কে রাতভর 'স্ট্রংরুমে' (গণনাকেন্দ্রে) রাখা ইভিএম পাহারা দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর কর্মীরা। ভোট গণনার আগে এখন সব ধরনের জল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে এই ইভিএম। বিরোধীদের আশঙ্কা, ইভিএম বদলে ভোটের ফল উল্টে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে শাসক দল বিজেপি। সেই আশঙ্কা আরও বেড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা একাধিক ভিডিও থেকে। এসব ভিডিওতে নিরাপত্তাবিহীন অবস্থায় ইভিএম আনা-নেয়ার ছবি দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্য সব ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, ইভিএমে কারচুপির কোনো প্রশ্নই নেই। ভোটে ব্যবহৃত সব ইভিএম স্ট্রংরুম আধা সেনাবাহিনীর কড়া পাহারায় সুরক্ষিত রয়েছে। এর আগে, ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে ২২টি বিরোধী দলের নেতারা দিলিস্নতে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন। বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তারা। পাঁচ রাজ্যে ইভিএম আনা-নেয়ার ভিডিও নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেন তারা। অভিযোগ, ইভিএম আনা-নেয়ার সময় কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা মানা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি কমিশন। তবে কমিশন জানিয়েছে, তদন্তের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর, চন্দৌলি, ডোমারিয়াগঞ্জ ও ঝাঁসিসহ বিহার, ঝাড়খন্ড থেকে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও কমিশন কর্তাদের দেখিয়ে বলেন, নিরাপত্তা রক্ষীদের অনুপস্থিতিতে ইভিএম রাখার ওই ভিডিওগুলো মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকেই আসছে। মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় গণনাকেন্দ্রে রাখা ভোটিং মেশিন দেখতে গিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের ভোপালের প্রার্থী এবং কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতা দিগ্বিজয় সিং এবং তার স্ত্রী। উত্তরপ্রদেশের মিরাট এবং রায়বারেলিতে গণনাকেন্দ্রের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন কংগ্রেসের কর্মীরা। উলেস্নখ্য, ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয় বিজেপি। সে সময় থেকেই ভোট গণনার আগে ভিভিপ্যাট পরীক্ষার দাবি করে বিরোধী দলগুলো। এরপরই দেশের শীর্ষ আদালত থেকে ভোট গণনার আগে ভিভিপ্যাট পরীক্ষা ও ইভিএমের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়ার নির্দেশ আসে। তবে এর পুরো দায়িত্বই নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেয় আদালত। এ সময় কমিশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ভিভিপ্যাট পরীক্ষা করা হবে। বুথফেরত জরিপ নিয়ে মুখ খুললেন রাহুল 'আস্থা রাখুন, আমাদেরই জয় হবে। আপনারা সত্যের জন্য লড়ছেন, আপনাদের পরিশ্রম ব্যর্থ হবে না।' নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে গতকাল দলীয় কর্মীদের এই বার্তাই দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কর্মীদের উদ্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বলেন, 'আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সতর্ক এবং সজাগ থাকুন। ভুয়া বুথফেরতে ভয় পাবেন না। নিজের ওপর এবং কংগ্রেসের ওপর আস্থা রাখুন।' সপ্তম দফা ভোটের দিনই বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের বুথফেরতের ফল প্রকাশ করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গড়ছে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ আসন সংখ্যা ৩০০ পেরিয়ে যাচ্ছে। যেখানে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। অন্যদিকে, অধিকাংশ বুথফেরতের মতে, কংগ্রেসের আসনসংখ্যা একশোর গন্ডি পেরোচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে গোটা ভারতেই বিমর্ষ হয়ে পড়েছে কংগ্রেসের কর্মীরা। ঝিমিয়ে পড়া কর্মীদের চাঙ্গা করতে শেষমেশ আসরে নামেন খোদ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এর একদিন আগে কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছিলেন, 'আমার প্রিয় কংগ্রেসকর্মী, বোন এবং ভাইয়েরা, গুজবে কান দেবেন না; বুথফেরত জরিপের ফলে হতাশ হবেন না। আপনাদের মনোবল ভেঙে দিতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছে। এখন সময় সতর্ক থাকার। ভোট গণনা কেন্দ্র এবং স্ট্রংরুমের দিকে সতর্ক নজর রাখুন। আমাদের চেষ্টার ফল মিলবেই, এটুকু আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।' এদিকে, ভোট গণনার দিন ভোটিং মেশিনে জালিয়াতির চেষ্টা করলে পরিণাম ভালো হবে না বলে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তাদের জোটগত মিত্রদের সতর্ক করেছেন রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টির (আরএলএসপি) নেতা উপেন্দ্র কুশওয়াহা। এ ধরনের কিছু ঘটলে সহিংস প্রতিশোধ নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'ভোট লুট হলে রাস্তায় রক্তের বন্যা বইয়ে দেবে জনগণ।' বিরোধীদের অভিযোগ অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক : মোদি বিরোধীদের ইভিএম কারচুপির অভিযোগকে পাত্তা দিতে নারাজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বিরোধীদের এসব অভিযোগকে 'অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক' বলেছেন। ভোট গণনার ৪৮ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার শরিক দলগুলোকে নৈশভোজে ডাকেন বিজেপির প্রধান অমিত শাহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই এসব কথা বলেন মোদি। ভোটের ফল জানতে দেরি হতে পারে এদিকে, এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফল জানতে অনেক দেরি হতে পারে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। কর্মকর্তারা মনে করছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু হলেও ২৩ তারিখ গভীর রাতে হয়তো ফল জানা যাবে। তবে অন্যবারের মতোই ফল জানানো হবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। ভারতের ভোট নেয়ার জন্য ইভিএম ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে গণনার দিন দুপুরের মধ্যেই মোটামুটিভাবে স্পষ্ট হয়ে যায় ফল। টুইটারের যুদ্ধেও এগিয়ে মোদি এদিকে, রাজপথ বা মাঠ ছেড়ে ভোটযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম)। সোশ্যাল মিডিয়ার কতটা দখল কার হাতে থাকছে, সে দিকে বিশেষ নজর রেখেছিল প্রায় সব রাজনৈতিক দলই। সেখানেও দেখা যাচ্ছে, জয়জয়কার নরেন্দ্র মোদিরই। সাত দফার নির্বাচনে শুধু মাত্র ভোটগ্রহণের দিনগুলোকে নিয়ে একটি জরিপ করে দিলিস্নর 'ইন্দ্রপ্রস্থ ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি'। সেখানেই দেখা যায়, বাকি সবাইকে পেছনে ফেলে ভোটের দিনগুলোতে অনেক এগিয়ে ছিলেন নরেন্দ্র মোদিই। শুধুমাত্র ভোটের দিনগুলোতেই মোট ১৭ লাখ ৪০ হাজার টুইট করা হয়েছে টুইটারে। সেখান থেকেই বেছে নেয়া হয়েছিল মোট ৮৬১টি 'হ্যাশট্যাগ'কে। দেখা যাচ্ছে, সেই হ্যাশট্যাগের লড়াইয়ে সবার আগে রয়েছেন মোদি। প্রতিটি দফাতেই প্রথম পাঁচটি হ্যাশট্যাগের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে #নমো অথবা #মোদি। যারা এই জরিপটি করেছেন, তাদের পক্ষ থেকে অধ্যাপক পন্নুরঙ্গম কুমারগুরু বলেছেন, 'যারা রাজনৈতিক বিষয়ে টুইট করছেন, তাদের মধ্যে ভোট দেয়ার প্রবণতা অনেক বেশি, এই সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছেছি এই জরিপের ফলেই। প্রতিটি দফাতেই প্রথম পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে দুটি বিজেপি-সম্পর্কিত, একটি দফায় প্রথম পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে চারটিই বিজেপি-সম্পর্কিত। তৃতীয় দফায় প্রথম পাঁচটির মধ্যে চারটিই হলো নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি ইনডিয়া, অমিত শাহ, বিজেপি রাজস্থান। কে কাকে ভোট দিচ্ছেন, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু গোপনীয়তা থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ খুব স্পষ্টভাবেই নিজের রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রকাশ করে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া ছবি যদি সারাদেশের বক্তব্য হয়, তা হলে বাকি সবার থেকে অনেকটাই এগিয়ে নরেন্দ্র মোদি- এমনটাই বলছেন জরিপকারীরা।