রাজশাহীতে এখনো আম পাড়া শুরু হয়নি

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০

বাংলা নিউজ
রাজশাহীর একটি আমবাগান -বাংলা নিউজ
রাজশাহীতে এ বছর জ্যৈষ্ঠের প্রথম দিনেই আম পাড়া শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত সময় মেনে অনেকেই আগাম গুটি জাতের আম ভাঙেন গাছ থেকে। কিন্তু এরপরও আমের রাজধানী রাজশাহী এখনও 'আম' শূন্য। কথা ছিল ২০ মে থেকে জাত আম গোপালভোগ ভাঙা হবে। কিন্তু সেখানেও ব্যতিক্রম! বলতে গেলে কেউই গোপালভোগ আম ভাঙেননি। প্রশ্ন জাগতে পারে যে, যেখানে প্রতিবছর আমের মৌসুমে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ না আসতেই তড়িঘড়ি করে আম পাড়া শুরু হয়ে যায়, সেখানে এবার ব্যত্যয় কেন? তার সহজ উত্তরে আম চাষিরা বলছেন, জেলা প্রশাসন ছক কষে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করে দিলেও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে বিভিন্ন জাতের আম এখনও গাছে পরিপক্বতা পায়নি। এর ওপর তাপদাহের মধ্যে রমজান মাস চলছে। ফলে আমের পরিপক্বতার এই সময়টাকে মুনাফা হিসেবেই দেখছেন তারা। সাধারণত রমজান মাসে আমের ব্যবসায় ভাটা থাকে। আর আমের পরিপক্বতায় আরও সময় হাতে আছে। তাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ঈদের পর মৌসুমের পুরো বাজারটা ধরতে চান রাজশাহীর আমচাষিরা। রাজশাহীর ছোটবনগ্রাম এলাকার আমচাষি ও ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী এখনও অনেক গাছ থেকে আম নামানো যাবে। কিন্তু গাছে রাখলেও ক্ষতি নেই, বরং লাভই আছে। একদিকে আমে পরিপক্বতা আসবে অন্যদিকে ঈদের পরের বাজারে কেবল আমই থাকবে। তরমুজ ও লিচুসহ অন্য মৌসুমি ফল শেষের দিকে যাবে। ফলে বাজারে তখন কেবলই আমের রাজত্ব থাকবে। এতে ব্যবসাও জমে উঠবে, মুনাফাও বাড়বে। পবার মথুরা গ্রামের আমচাষি নূরুল আমিন বলেন, রমজান মাসে গাছ থেকে আম নামানোর জন্য শ্রমিক সংকট থাকে। এর ওপর ধান কাটারও মৌসুম চলছে। তার ওপরে আবার তাপদাহ। আর গাছে আম থাকলে যেহেতু এখন অসুবিধা নেই, তাই সবাই একটু সময় নিচ্ছে। এদিকে, মঙ্গলবার রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর ছাড়াও শহরের শালবাগান ও নওদাপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে আমের হাট একদম ফাঁকা। তরমুজসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলে এখনও ভরে আছে প্রতিটি আড়ৎ। এই আড়ৎগুলোই গত বছর আমে ভরা ছিল। সময় বেঁধে দেয়া ও আম ভাঙা প্রসঙ্গে রাজশাহী ফল গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিম উদ্দিন বলেন, সময় বেঁধে দেয়ায় কোনো ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে গাছে এখনও আম পরিপক্ব হচ্ছে, এটা হতেই পারে। যা স্বাভাবিকভাবে দেখা উচিত। চাষিরা ইচ্ছে করলে ভাঙতে পারবেন আবার কিছুটা বিলম্বও করতে পারবেন। ভেবে দেখলে আমচাষি ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। এদিকে, রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। এবার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে থেকে গুটি আম নামাতে পারছেন চাষিরা। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানীপছন্দ ২৫ মে, খিরসাপাতা বা হিমসাগর ২৮ মে এবং লক্ষ্ণণভোগ নামানো যাবে ২৬ মে থেকে। এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি এবং ফজলি ১৬ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১৭ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা জাতের আম। তবে কোনো গাছের আম আগে পাকলে নিজ নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তা জানাতে হবে। তার পরিদর্শন শেষে মতামতের ভিত্তিতে ওই গাছ থেকেও নামানো যাবে আম। রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম আবদুল কাদের বলেন, বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী কেবল গাছে পাকলেই যে কোনো জাতের আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। আর বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ীও আম ভাঙতে পারবেন গাছ থেকে। যদি কোনো আম আগেই পেকে যায় তবে সেই সম্পর্কে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানাতে হবে। তিনি বাগান পরিদর্শন করে আম পাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই চাষিরা তাদের গাছ থেকে নির্ধারিত সময়ের আগে আম নামাতে পারবেন বলে উলেস্নখ করেন জেলা প্রশাসক। আম ভাঙার বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের এরই মধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাপদাহ কেটে গেলে আর নতুন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না আসলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা হবে না।