নামাজে গড়িমসির কঠিনতম সাজা

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, 'অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামাজ নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অন্তর্বর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সুতরাং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের ওপর কোনো জুলুম করা হবে না।' (সুরা: মারইয়াম, আয়াত: ৫৯-৬০)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নামাজ নষ্ট করার অর্থ এই নয় যে, নামাজ সম্পূর্ণভাবে তরক করেছে। এর অর্থ হলো সময় চলে যাওয়ার পর আদায় করা। হজরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রা.) বলেন, এর অর্থ পরবর্তী নামাজের সময় এসে পড়া পর্যন্ত বিলম্বিত করা। যে লোক নামাজকে এভাবে বিলম্বিত করে বা অবহেলা করে তওবা না করেই মারা যায়, আলস্নাহ তাকে জাহান্নামের 'গায়' নামক কূপে নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। এটা জাহান্নামের অত্যন্ত নিচ ও নোংরা একটি গহব্বরের নাম। সুরা মাউনের ৪, ৫ নম্বর আয়াতে আলস্নাহ তায়ালা বলেন, সেই সব নামাজিদের জন্য 'ওয়াইল' যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে অবহেলা বা শিথিলতা করে। অর্থাৎ আলসেমি বা গড়িমসি করে। হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, এই অবহেলা বা শিথিলতা কী? তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বিত করা। তাদের নামাজি বলা হয়েছে। কিন্তু উদাসীনতা ও বিলম্বের কারণে তাদের 'ওয়াইল-এর হুমকি দেয়া হয়েছে। ওয়াইল অর্থ আজাবের কঠোরতা। কারও কারও মতে ওয়াইল হচ্ছে জাহান্নামের এমন একটি স্থান, যেখানে পৃথিবীর সমস্ত পাহাড়, পর্বত ঢেলে দিলেও তা তীব্র দহনে গলে যাবে। তওবা বা অনুশোচনা সহকারে ক্ষমা না চাইলে নামাজ কাজা ও আলসেমিকারীদের জন্য এই স্থান নির্ধারিত থাকবে। আলস্নাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন, 'মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আলস্নাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।' (সুরা: মুনাফিকুন, আয়াত: ৯)। এ আয়াতে 'আলস্নাহর স্মরণ' বলতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে বোঝানো হয়েছে। অতএব, যে ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষেত-খামার এবং পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মেটানোর ব্যস্ততার দরুন যথাসময়ে নামাজ আদায় করে না, সে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, হাশরের দিন প্রথমেই বান্দার আমলসমূহের মধ্যে নামাজের হিসাব নেয়া হবে। নামাজ সঠিকভাবে আদায় করে থাকলে পরিত্রাণ পাবে নচেৎ ব্যর্থতা অবধারিত। (তিবরানি)। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য নামাজ ত্যাগ করা।' (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিজি)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, 'যে ব্যক্তির আসরের নামাজ ছুটে গেল, তার আমল নষ্ট হয়ে গেল।' রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিল, সে আলস্নাহর জিম্মাদারি থেকে বের হয়ে পড়ল।' তিনি আরও বলেছেন, 'মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বলবে, আলস্নাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং নামাজ ও জাকাত না আদায় করবে। যখন এগুলো করবে, তখন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া তাদের জান-মাল আমার হাতে নিরাপদ। তাদের আলস্নাহর কাছে হিসাব দিতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)। নবী (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করবে, বিচার দিবসে তার জন্য নামাজ নূর হবে এবং মুক্তির উপায় হবে। আর যে ঠিকমতো নামাজ আদায় করবে না, তার জন্য নামাজ নূর ও নাজাতের উসিলা হবে না। হাশরের দিন তার ফেরাউন, কারুন, হামান ও উবাই বিন খালফের সঙ্গে হাশর হবে। (আহমাদ, তিবরানি)। ইমাম আহমাদ হজরত মু'আজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, তার ওপর আলস্নাহপাকের কোনো দায়িত্ব থাকে না।' (আহমাদ)। রাসুল (সা,) আরও বলেন, 'যে ব্যক্তি কোনো ওজর (শরিয়া কারণ) ব্যতিত দুই ওয়াক্তের নামাজ একত্রে পড়ে, সে এক মস্তবড় কবিরা গুনাহসমূহের মধ্য হতে একটিতে প্রবেশ করল। (হাকেম)।