নেতায় নেতায় বিরোধ বিএনপিতে রক্তক্ষরণ

প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

হাসান মোলস্না
জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ, চলমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ এবং মির্জা ফখরুলের শপথ না নেয়া আসনে ফের নির্বাচনে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের মতবিরোধ ও কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে দলের দুই শীর্ষ নেতা করাবন্দি খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়েছে। জিয়া পরিবারের শীর্ষ পর্যায়ে মতবিরোধে রোষানলে পড়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা। সব মিলে রক্তক্ষরণ চলছে বিএনপিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দূরত্ব বেড়েছে। এই ক্ষোভ উত্তাপে রূপ নেয় বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনের বিষয়ে সিনিয়র কারো সঙ্গে পরামর্শ না করার মধ্য দিয়ে। কারণ, উপ-নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটিতে হয়নি, মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক বসেনি। খালেদা জিয়াকেও জানানো হয়নি কিছুই। উল্টো তাকে প্রার্থী করতে মনোনয়নপত্র পাঠানো হয়। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের মতপার্থক্যের বিষয়টি দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার কানেও গেছে। বিষয়টি শুনে তিনি বিব্রত হয়েছেন। বগুড়া নির্বাচনে তাকে প্রার্থী করার খবরেও তিনি বিস্মিত হন। বেগম জিয়া তার সঙ্গে দেখা করতে বিশেষ দূতের কাছে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র পাঠানো হলে তিনি স্বাক্ষরও করেননি। নেতাকর্মীরা বলছেন, বগুড়ায় প্রার্থী না হয়ে খালেদা জিয়া একটি বার্তা দিয়েছেন। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয় এবং তাদের সঙ্গে সমঝোতা যে তিনি করতে চান না তা স্পষ্ট করেছেন। দলের একাধিক নেতা জানান, খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল। দলের নেতৃত্ব নেয়ায় তাকে সহযোগিতা করার মানসিকতা ছিল তাদের। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের মতামত নেয়ায় নেতারাও সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এরপর বিএনপির পুনর্গঠন, শপথ গ্রহণ এবং সর্বশেষ বগুড়া নির্বাচনের বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ জোরালো হয়।। দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বলছে, তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে বিএনপির সাংগঠনিক প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে, তা মেনে নিতে পারছেন না নীতিনির্ধারদের প্রায় সবাই। দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো একতরফাভাবেই হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম- স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জানানো হচ্ছে না। জ্যেষ্ঠ নেতাদের 'গুরুত্ব' না দেয়ায় তারেক রহমানের সমালোচনা হচ্ছে প্রকাশ্যে। স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ অধিকাংশ নেতার সঙ্গে তার দূরত্ব বেড়েছে অনেক। এ বিষয়ে জানতে একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের মতবিরোধ শুরু হয়। দলের ৪ এমপির শপথ গ্রহণে ওই বিরোধ তীব্র হয়। আর বগুড়া নির্বাচন নিয়ে তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত চরম 'অপরিপক্ব' বলে মনে করেন তারা। স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা আলাপকালে বলেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসেবে এমপিদের শপথ নেয়ার আলোচনা, কেন বিএনপির এমপিরা শপথ নিল, কেন মির্জা ফখরুল শপথ নিলেন না, কেনই বা শপথ না নেয়া আসনে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো? এসব বিষয় স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উত্থাপন করবেন তারা।