নভেম্বরের শেষভাগে এসে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ভোরের ঘনকুয়াশা জনজীবন স্থবির করে তুলেছে, পাশাপাশি তীব্র শীতে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘনকুয়াশা কৃষিতেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এদিকে, শুক্রবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। বাতাসে আর্দ্রতা ৭৭ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেক কম। তেঁতুলিয়াসহ উত্তরাঞ্চলের শীতপ্রবণ এলাকায় দিন দিন কমছে তাপমাত্রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ রংপুর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে শীতের আগমন জোরালভাবে অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রার দ্রম্নত পতনে উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এ অঞ্চলের পঞ্চগড় ছাড়া অন্য জেলার তাপমাত্রাও ১৪ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যে অবস্থান করছে।
শীতের এই তীব্রতা কেবল আবহাওয়ার পরিবর্তন নয় বরং কৃষি, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। কৃষকরা ফসল রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আর হতদরিদ্ররা শীতবস্ত্র সংকটে বিপর্যস্ত।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর উত্তরাঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় তীব্র শীতের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বেশ কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ আঘাত হানতে পারে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, 'এবার শীতের তীব্রতা বেশ বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকা এবং নিচু জমির আশপাশে ঠান্ডা বাতাস ও ঘনকুয়াশা আরও বাড়বে, যা জীবনযাত্রা এবং কৃষি খাতে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।'
উত্তরাঞ্চলজুড়ে ঘনকুয়াশার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলের ক্ষেত। আলু, সরিষা, গম এবং শীতকালীন সবজির চাষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে।
দিনাজপুরের চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, ঘনকুয়াশায় আলুর পাতায় দাগ পড়েছে। জমিতে বেশি আর্দ্রতা থাকায় গমের চারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। সবজি ক্ষেতেও পোকামাকড় ও রোগের প্রকোপ বেড়েছে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, 'সরিষার ফুল ঝরে পড়ছে। উৎপাদন কম হলে লোকসান হবে। কীটনাশক দিয়ে লাভ হচ্ছে না। কুয়াশা এত বেশি যে, সব সময় জমি ভিজে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ফসল রক্ষার জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। তবে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ- এসব পদ্ধতিতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে, যা তাদের পক্ষে বহন করা কঠিন।'
এদিকে, শীতের কারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের বেশিরভাগই শ্বাসকষ্ট এবং ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। তীব্র শীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উত্তরাঞ্চলের শীত মোকাবিলায় ও ফসল রক্ষায় কৃষকদের আরও কার্যকর প্রশিক্ষণ এবং সাশ্রয়ী মূল্যে কীটনাশক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দ্রম্নত পৌঁছে দেওয়া এবং ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করার পরিকল্পনা করলে ভালো হবে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই ধরনের কনকনে শীত প্রতি বছরই আসে, তবে এ বছর তা আরও তীব্রতর বলে মনে হচ্ছে। অনেকে গরম কাপড়ের অভাবে সমস্যায় পড়েছেন।
া