আমানত খেয়ানতকারীর স্থান নিশ্চিত জাহান্নাম

প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মুমিন বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আমানতকারীর আমানত রক্ষা করা এবং যথাসময়ে তাকে তা হকদারকে ফিরিয়ে দেয়া। আমানতদারীর গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'নিশ্চয়ই আলস্নাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন, আমানত তার হকদারকে প্রত্যাবর্তন করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আলস্নাহ তোমাদের যে উপদেশ দিচ্ছেন তা কত উৎকৃষ্ট আলস্নাহ সর্বশ্রোতা আলস্নাহ সর্বস্রষ্টা।' (সূরা নিসা: ৪৮)। উলিস্নখিত আয়াতে আমানতের বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে একদিকে যেমন হকদারের হক প্রত্যর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে বিচারকের বিচারকার্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করতে বলা হয়েছে। এ থেকে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়, আমানতদারী শুধু হকদারকে হক বুঝিয়ে দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করাটাও আমানতদারী। আর এই দায়িত্ব অর্পণ যেমনিভাবে বান্দার পক্ষ থেকে অন্য বান্দার ওপর হতে পারে আবার আলস্নাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতিও হতে পারে। যেমন আলস্নাহ মানুষকে সুস্থ বিবেক, হাত, পা, চক্ষুসহ যত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করেছেন সেগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহারেরও নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কোনো ব্যক্তি আলস্নাহ-প্রদত্ত এই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আলস্নাহর নির্দেশের বাইরে, পছন্দের বাইরে কোনোভাবে ব্যবহার করে তবে সে কিয়ামতের দিন খেয়ানতকারীদের দলভুক্ত হয়ে উঠবে। আল কুরআনে আলস্নাহ ইরশাদ করেছেন, 'চোখসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপনে রাখে তা তিনি (আলস্নাহ জানেন)।' (সূরা মুমিন : ১৯)। ওই আয়াতে চোখের অপব্যবহারকে খেয়ানত বলা হয়েছে। চোখের দ্বারা খেয়ানত বলতে চোখ দ্বারা এমন সব কিছু দেখা যা দেখলে আলস্নাহ অসন্তুষ্ট হন সেটাই চোখের খেয়ানত, অনুরূপভাবে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিষয়টাও একইভাবে প্রমাণিত হয়। আলস্নাহর পছন্দের বাইরে কোনো নাফরমানির কাজে ব্যয় করাও সময়ের খেয়ানত। আবার কেউ যদি কারও সঙ্গে কোনো নির্ধারিত সময়ের জন্য কারও সঙ্গে কোনো চাকরিতে চুক্তিবদ্ধ হয় আর ওই চাকরিজীবী যদি ওই চুক্তিবদ্ধ সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি না নিয়ে অন্য কোথাও সময় ব্যয় করে তাও হবে বড় ধরনের শুধু খেয়ানতই নয়; বরং ধোঁকাবাজির শামিল। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলা করা, ধোঁকা দেয়া, সময়ের খেয়ানত করার গুনায় লিপ্ত হবে। রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, যার চরিত্রে আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না তার দ্বীন নেই। (মুসনাদে আহমাদ)। অন্য হাদিসে রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি- যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তখন তা ভঙ্গ করে আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তার খেয়ানত করে। (বুখারি, মুসলিম)। রাসূল (সা.) আরও বলেন, 'মানুষের চারিত্রিক গুণাবলির মধ্য থেকে যে গুণটি সবচেয়ে আগে অদৃশ্য হয়ে যাবে, তা হলো আমানতদারী তথা বিশ্বস্ততা। আর শেষ অবধি যা রয়ে যাবে, তা হচ্ছে নামাজ। এমন অনেক নামাজি আছে, যারা কোনো কল্যাণই অর্জন করতে পারে না। আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, 'তোমরা খেয়ানত করো না কেননা খেয়ানত কতই না শাস্তি ও তিরস্কারযোগ্য।-আবু দাউদ ও তিরমিজি। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আমানতের খেয়ানতকারীকে হাজির করে বলা হবে, 'তোমার কাছে গচ্ছিত আমানত ফিরিয়ে দাও। সে জওয়াব দেবে, ইয়া পরওয়ারদেগার! কীভাবে তা ফিরিয়ে দেব? পৃথিবী তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা জিনিসটি যেভাবে রাখা হয়েছিল ঠিক অনুরূপ আকারে জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে তাকে দেখানো হবে। অনন্তর তাকে বলা হবে, যাও, ওখানে নেমে ওটা তুলে আন। অতঃপর সে নেমে গিয়ে সেটি কাঁধে বয়ে নিয়ে আসবে। তার কাছে জিনিসটির ওজন পৃথিবীর সব পর্বত অপেক্ষা বেশি মনে হবে। তার ধারণা হবে, তুলে আনলেই সে দোজখের আগুন থেকে নাজাত পাবে। কিন্তু সে যখন জাহান্নামের শেষ প্রান্তে চলে আসবে, তখনই ওই জিনিসটি নিয়ে পুনরায় জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে যাবে। এভাবে সে চিরকালই জাহান্নামে থাকবে।