স্বৈরশাসক আসাদের পতন

সিরিয়ায় নতুন যুগের সূচনা

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাশার আল-আসাদ
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে রোববার সকালে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশ ছাড়েন এই স্বৈরশাসক। বাশার আল-আসাদ টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এর আগে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেন। বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আল-আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান হলো। সিরিয়ায় সূচনা হলো নতুন যুগের। এর আগে গত কয়েক দিনে আলেপ্পো, হোমসসহ সিরিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন বিদ্রোহীরা। তারা ধীরে ধীরে দামেস্কের দিকে এগোতে থাকেন। শনিবার রাতে দামেস্কের উপকণ্ঠে পৌঁছে যান বিদ্রোহীরা। আর রোববার সকালে তারা দামেস্কে ঢুকে পড়েন। বাশার আল-আসাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর বিদ্রোহীরা দামেস্ককে, সিরিয়াকে 'মুক্ত' বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এদিকে, ক্ষমতা ছেড়ে কোনোমতে জীবন নিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পালিয়ে গেলেও যে বিমান তাকে নিয়ে আকাশে উড়েছে, এতে তার স্ত্রী আসমা এবং দুই সন্তান ছিলেন কিনা, সেটাও কেউ বলতে পারছেন না। কেউই বলতে পারছেন না বাশার আল আসাদের শেষ গন্তব্য আসলে কোথায়। তাকে বহনকারী বিমানকেও আর শনাক্ত করতে পারেনি ফ্লাইটরাডার। এর আগে শোনা যায়, বিমানটি কিছু দূর যাওয়ার পর গতিপথ পরিবর্তন করে ইউটার্ন নেয়। এমন অবস্থায় সিরিয়ার দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, যদি ওই বিমানে আসাদ থেকে থাকেন, তাহলে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। কারণ, তাকে বহনকারী বিমানটি ফ্লাইটরাডার ওয়েবসাইট থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। কিন্তু শতভাগ সত্য কোনো তথ্য মিলছে না। ইথারে অনেক খবর। গত এক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক উত্তাল অবস্থা মোকাবিলা করছিলেন বাশার আল আসাদ। জল্পনা আছে, তিনি মস্কো বা তার প্রধান মিত্র ইরানের কাছে আশ্রয় চেয়ে থাকতে পারেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া থেকেও নিশ্চিত করা হয়নি তিনি কোথায় আছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তাকে আশ্রয় দেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। তাহলে কোথায় যেতে পারেন বাশার? তাকে বহনকারী বিমান যখন ইউটার্ন নিয়েছে এবং তা অদৃশ্য হয়েছে, এরপরই জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এদিকে, রোববার এক বিবৃতিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) জানায়, 'আমরা দামেস্ককে (সিরিয়ার রাজধানী) জালিম বাশার আল-আসাদের হাত থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি।' এইচটিএস বলেছে, একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। একটি নতুন যুগের সূচনা হলো। বিদ্রোহীরা বলেছেন, বাশার আল-আসাদ পরিবারের অর্ধশতাব্দীর শাসনামলে যারা বাস্তুচু্যত হয়েছেন বা কারাবন্দি হয়েছেন, তারা এখন নিজ নিজ ঘরে ফিরতে পারবেন। এইচটিএস বলেছে, এটি হবে একটি নতুন সিরিয়া, যেখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করবেন। এই সিরিয়ায় ন্যায়বিচারের জয় হবে। এই ঘোষণার পর জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন এবং আনন্দ-উলস্নাস শুরু করেন। লন্ডনের চক্ষু চিকিৎসক থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এসেছে, তবে একটি গাড়ি দুর্ঘটনাই সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রভাবক ছিল। এটি আবার ঘটেছে তিনি যেখানে বসবাস করতেন, এর থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে। পিতার হাত থেকে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য তাকে তৈরি করা হয়নি। কিন্তু ক্ষমতার পথে আসাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার বড় ভাই বাসেলের গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃতু্যর পর। ১৯৯৪ সালে দামেস্কের কাছে ওই দুর্ঘটনা যখন ঘটে আসাদ তখন লন্ডনে চক্ষু চিকিৎসা নিয়ে পড়ছিলেন। বাসেলের মৃতু্যর পর আসাদকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা শুরু হয়। পরে তিনিই দেশের নেতৃত্ব দিয়েছে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, যে যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন, বাস্তুচু্যত হয়েছেন অনেকে। আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদ প্রায় ৩০ বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৬৫ সালে বাশার আল-আসাদের জন্মের সময়টাতেও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময়ই মিশর ও সিরিয়া মিলে স্বল্পকালীন যে আরব প্রজাতন্ত্র করেছিল, সেটা ভেস্তে যাওয়ার পর বাথ পার্টি ক্ষমতা দখল করে। অন্য আরব দেশের মতো সিরিয়াতেও গণতন্ত্র ছিল না ও বহুদলীয় নির্বাচন হতো না। আঞ্চলিক রাজনীতিতে সেখানকার সব দেশেই আরব জাতীয়তাবাদ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিল। আসাদের পরিবার যে সম্প্রদায়ের ছিলেন, তারা ছিলেন সিরিয়ার খুবই অনগ্রসর একটি সম্প্রদায়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের অনেক সদস্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। হাফিজ আল-আসাদ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাথ পার্টির সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন। পরে দেশের প্রেসিডেন্ট হন ১৯৭১ সালে। এরপর ২০০০ সালে মৃতু্য পর্যন্ত তিনি ওই পদেই বহাল ছিলেন। তার সময় অনেকগুলো সামরিক অভু্যত্থান হলেও তা সফল হয়নি। বরং বিরোধীদের দমন ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে তিনি কঠোর হাতে দেশ শাসন করেছেন। মেডিসিন ও লন্ডন রাজনীতি ও সামরিক বাহিনী থেকে দূরে থাকতে বাশার আল-আসাদ ডাক্তার হিসেবেই তার ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন। দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষে তিনি ১৯৯২ সালে যুক্তরাজ্যে যান লন্ডনের ওয়েস্টার্ন আই হসপিটালে চোখের ডাক্তার হিসেবে পড়ালেখার জন্য। এ সময় তিনি ইংরেজ গায়ক ফিল কলিন্সের অনুরক্ত হন ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ হন। লন্ডনেই আসমা আল-আখরাসের সঙ্গে তার দেখা হয়। পরে তারা বিয়ে করেন। আসমা কিংস কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তেন। তিনি হার্ভার্ডে ভর্তির জন্য বিবেচিত হয়েছিলেন। কিন্তু বাশার আল আসাদের জীবনের গতিপথ পাল্টে যায় বড় ভাইয়ের মৃতু্যর পর। ওই মৃতু্যই মূলত বাশার আল-আসাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ তাকে ফিরে যেতে হয় সিরিয়ায় এবং এরপর তাকে সিরিয়ার পরবর্তী নেতা হিসেবে প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়। বাশার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন এবং ভবিষ্যতের জন্য জনগণের সামনে নিজের ইমেজ তৈরির প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পরিবর্তনের স্বপ্ন হাফিজ আল-আসাদের মৃতু্যর পর ২০০০ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দ্রম্নতই প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন বাশার আল-আসাদ। তবে, এ জন্য দেশটির সংবিধানে প্রেসিডেন্টের সর্বনিম্ন বয়স ৪০ বছর থাকার যে বিধান ছিল, সেটা পরিবর্তন করতে হয়। দায়িত্ব নিয়ে তিনি 'স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন, জবাবদিহিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবনা'র কথা বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাস পর তিনি আসমা আল-আখরাসকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান- হাফিজ, জেইন এবং কারিম। প্রথমদিকে তার রাজনৈতিক সংস্কার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা-বিষয়ক বক্তব্য অনেককে আশাবাদী করেছিল। তার নেতৃত্বের স্টাইল ও পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত আসমার সঙ্গে জুটিবদ্ধ হওয়া- অনেককে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক দমন অভিযান চালায় ও বহু সোচ্চার কণ্ঠকে আটক করে। বাশার আল-আসাদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমিত সংস্কার করলে ব্যক্তি খাত উৎসাহী হয়ে ওঠে। তবে তার শাসনের প্রথম দিকে উত্থান হয় তার চাচাত ভাই রামি মাখলৌফের। তিনি সম্পদ আর ক্ষমতার সমন্বয়ে বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। ইরাক এবং লেবানন ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধকে ঘিরে বাশার আল-আসাদের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। তিনি ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছিলেন। সম্ভবত তার আশঙ্কা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর পরবর্তী টার্গেট সিরিয়া হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সে সময় ইরাকে তাদের বিরোধীদের কাছে অস্ত্র চোরাচালানে সহায়তার জন্য দামেস্ককে দায়ী করছিল। সে সময় ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর ২০০৫ সালে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি বৈরুতে বিস্ফোরণে নিহত হলে এ ঘটনার জন্য অনেকে সিরিয়া ও তার সহযোগীদের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে। লেবাননের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয় ও দামেস্কের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে লেবাননে থাকা সিরিয়ার ৩০ বছরের সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার করতে হয়। আসাদ ও তার লেবাননের সহযোগী হিজবুলস্নাহ অবশ্য ওই হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। যদিও পরে বিচারে বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইবু্যনালে হিজবুলস্নাহর কয়েকজন সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, জিহাদ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘাত বেড়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘের হিসেবে লাখ লাখ মানুষ হতাহত হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোও জড়িয়ে পড়তে শুরু করে। রাশিয়া, ইরান এবং ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আসাদের বাহিনীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, তুরস্কসহ কিছু উপসাগরীয় দেশ সশস্ত্রবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয়। শুরুতে আসাদবিরোধীরা গণতন্ত্র ও মুক্তির কথা বললেও দ্রম্নতই সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টিও উঠে আসে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের বদলে আসাদ নিজের অ্যালাউইটস গোত্রের লোকজনকে সুবিধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সূত্র ধরে অ্যালাউইটসদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ইসলামপন্থি কিছু গ্রম্নপ। আবার ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা আসাদ সরকারকে সমর্থন দেয়। প্রতিবেশী ইরাকে ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর উত্থান হয়ে গেছে। তারা সিরিয়ারও কিছু জায়গা দখল করে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর রাক্কাকে রাজধানী ঘোষণা করে। ২০১৩ সালে দামেস্কের কাছে বিরোধী অধু্যষিত পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌতায় রাসায়নিক হামলা হলে শত শত মানুষ মারা যায়। পশ্চিমারা এবং সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠীগুলো এই হামলার জন্য আসাদ সরকারকে দায়ী করে। তবে দামেস্ক এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। পরে আন্তর্জাতিক চাপে তারা রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত ধ্বংস করতে রাজি হয়। কিন্তু এতে করে সিরিয়া যুদ্ধের নৃশংসতা কমেনি। আরও রাসায়নিক হামলা হয়েছে পরবর্তীতে। জাতিসংঘের একটি কমিশন সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের বিরুদ্ধেই হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে। ২০১৫ সালে প্রায় পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় আসাদ সরকার। দেশের বড় অংশের ওপরই তখন বাশার আল-আসাদের আর কর্তৃত্ব ছিল না। তবে, পরে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি পাল্টে যায়, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো আবার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন বাশার আল-আসাদ। গাজা যুদ্ধ ২০১৮-২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমঝোতার আলোকে সরকারি বাহিনী সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। যদিও ইসলামপন্থি বিরোধী গ্রম্নপগুলো এবং কুর্দি মিলিশিয়ারা দেশটির উত্তর ও উত্তরপূর্ব এলাকায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছিল। ওই সমঝোতা আসাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে এবং তিনি আরব কূটনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসেন। ২০২৩ সালে আরব লীগের সদস্যপদ ফিরে পায় সিরিয়া। বেশ কিছু আরব দেশ আবার দামেস্কে দূতাবাস চালু করে। নিজের শাসনের তৃতীয় দশকে দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও মনে হচ্ছিল যে, প্রেসিডেন্ট তার বড় চ্যালেঞ্জগুলো উতরে গেছেন। তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা করলে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয়, যা লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে আসাদের সহযোগী হিজবুলস্নাহর ওপর। হিজবুলস্নাহ নেতা হাসান নাসরালস্নাহও নিহত হন। লেবাননে যেদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, সেদিনই বিস্ময়করভাবে হামলা করে দ্রম্নত আলেপ্পো দখল করে নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস এর নেতৃত্বে সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী। তারা দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে হামা ও অন্য শহরগুলো দখল করে নেয়। দক্ষিণাঞ্চল তখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু আসাদের অবস্থান দ্রম্নতই নড়বড়ে হয়ে পড়ে, কারণ গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ইরান ও রাশিয়া তার সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা দামেস্ক ঢুকে পড়েছে এবং বাশার আল-আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে করে অজানা গন্তব্যে চলে গেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমেই অবসান হলো সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসন।