অবৈধ বিদেশিদের থাকতে দেওয়া হবে না :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত কোনো বিদেশিকে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, 'অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে আমরা পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কোনো বিদেশিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।' বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রোববার সচিবালয়ের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। কোন দেশের কত নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'কতজন আছে, সেই পরিসংখ্যানটা এখন আমাদের কাছে নেই। এটা যদি থাকত, তবে আমি বলে দিতাম এতজন আছে। 'অনেক দেশেরই আছে, আমি কোনো দেশের নাম উলেস্নখ করতে চাচ্ছি না। তবে কোনো দেশেরই অবৈধ নাগরিকদের আমরা বাংলাদেশে থাকতে দেব না।' এক প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এটা হঠাৎ করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে এটা জড়িত নয়। এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই।' এদিকে রোববারই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অনেক সময় থার্টিফার্স্ট নাইটে আমাদের তরুণদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এটা যদি আপনারা আগে থেকে বুঝান যে, এটা করা ঠিক না। এ বিষয়ে আপনারা তাদের নিষেধ করতে পারেন। তাহলে তারা সাবধান হবে। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় তারা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের পানি-টানি খায়। থার্টিফার্স্ট নাইটে যে নরমাল বারগুলো আছে, আমরা সেগুলো বন্ধ রাখব। তরুণদের পানি-টানি খাওয়ার (মদ্যপান) বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, কনফাইন্ড (ঘরের মধ্যে বসে খেতে হবে), রাস্তাঘাটে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটে আমরা ফানুস উড়ানোর জন্য নিষেধ করেছি। আতশবাজি এবং ফানুস- এগুলো আমরা নিষেধ করেছি। 'সীমান্তে কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদার' একিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ছাত্র-জনতার বিজয়কে সুসংহত করতে বিজিবি সীমান্তে কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদার করেছে। যা অব্যাহত আছে। সীমান্তে কড়া নিরাপত্তার কারণে বেআইনিভাবে কেউ যাতায়াত করতে পারছে না। এমনকি কাউকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। পতিত সরকারের প্রায় অর্ধশত বিতর্কিত ব্যক্তিকে সীমান্ত পথে পালানোর সময় গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে বিজিবি। রোববার বিকাল ৩টায় ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে জুলাই বিপস্নবে আহত হয়ে বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতাকে দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারাদেশে বিজিবি অত্যন্ত সহনশীল, মানবিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আহতদের স্থায়ী সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। পাশাপাশি বিজিবির মাধ্যমে আহতদের অনেককেই স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হবে। অন্যান্য বাহিনী ছাড়াও নানাভাবে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয় হয়। এরপর সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। সেই সঙ্গে বহু সাহসী ভূমিকা রেখেছে বাহিনীটি। অদ্যাবধি বাহিনীটি সেই সাহসী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, থানাগুলোর কার্যক্রম সচল করা, রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা, কলকারখানা সচল রাখাসহ পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনে বিজিবি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চলমান প্র্রেক্ষাপটে বিজিবি দেশের সীমান্ত রক্ষায় জোরালো ভূমিকা পালন করছে। যে কারণে গত ৩ মাসে সীমান্তে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক চোরাকারবারি আটক হয়েছে। জব্দ হয়েছে বিপুল ভারতীয় চোরাচালানি পণ্য। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জুলাই-আগস্টের উত্তাল সময়ে বিজিবির ইতিবাচক ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। শুধু তাই নয়, ছাত্র-জনতার বিজয় পরবর্তী সময়েও বিজিবি অত্যন্ত নিষ্ঠা, আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যা সত্যিকার অর্থেই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ইলিশ পাচাররোধে বিজিবি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতেও ভারতে শুধু ইলিশ নয়, যেকোনো পণ্য পাচাররোধে বিজিবি আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি এক নতুন বাংলাদেশের ঠিকানা পেয়েছে। সেই অভীষ্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজিবিও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় জুলাই বিপস্নবের শুরু থেকেই নিজ উদ্যোগে বিজিবি হাসপাতালে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে বাহিনীটি। আজ (রোববার) পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত আহত ছাত্র-জনতাকে বিভিন্ন মেয়াদে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আহতদের বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। বাহিনীটির তরফ থেকে আন্দোলনে আহত ১০৭ জন ছাত্র-জনতাকে পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (রোববার) আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ জন যোদ্ধাকে সহযোগিতা করা হলো। বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, চিকিৎসা ছাড়াও বিজিবির উদ্যোগে শহীদ আবু সাঈদ ফাউন্ডেশনে ৫ লাখ টাকা অনুদান, জয়পুরহাটের শহীদ নজিবুল সরকার বিশালের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা অনুদান ও ঢাকার পপুলার হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিজিবিকে। 'সবার উপরে দেশ' এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বিজিবি সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আহমেদ ফেরদৌস, উইমেন সাপোর্ট গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠাতা তৌহদা হক, আহত ছাত্র-জনতা ও তাদের অভিভাবকরা।