দরপত্র জমা দেয়নি বিদেশি কোম্পানিগুলো

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো সাড়া মিলল না

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সাতটি বিদেশি কোম্পানি দরপত্রের নথি কিনেছিল শুরুতে। এটি আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে তিন মাস সময় বাড়ানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিদেশি কোম্পানি আসেনি। দরপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে সোমবার দুপুর ১টায়। এর মধ্যে একটি দরপত্রও জমা হয়নি। এখন নতুন করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তিন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এটি নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে পারে বিদেশি কোম্পানি। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় গ্যাসের দাম কমবে চুক্তি অনুসারে। এতে হয়তো বিনিয়োগের আগ্রহ পায়নি বিদেশিরা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। সমুদ্রসীমা বিজয়ের এক যুগ পরও তেল-গ্যাস আবিষ্কার করা যায়নি বঙ্গোপসাগরে। চারটি বিদেশি কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি ছেড়ে গেছে সময়ের আগেই। আগামী ফেব্রম্নয়ারিতে ছেড়ে যেতে পারে আরেকটি। ছয় মাস সময় দিয়ে গত ১০ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে সময় শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে তিন মাস বাড়িয়ে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় অন্তর্র্বর্তী সরকার। বিদেশি কোম্পানিকে আগ্রহী করতে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি)-২০২৩ করা হয়েছিল। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম নির্ধারিত না রেখে জ্বালানি তেলের দামের ১০ শতাংশ ধরা হয়। তেলের দাম বাড়লে গ্যাসের দামও বাড়বে, কমলে এটিও কমবে। এখন তেলের দাম ৭০ থেকে ৭২ ডলার, এতে গ্যাসের দাম হবে ৭ থেকে ৭ দশমিক ২ ডলার। দরপত্র ডাকার সময় তেলের দাম ছিল ৯০ ডলারের বেশি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, কেউ দরপত্রে অংশ নেয়নি। অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে কোনো কারণও জানায়নি। এখন ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও নিজেরা বসে মূল্যায়ন করে দেখা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে আবার দরপত্রের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সনমবিল ও শেভরন, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস, নরওয়ে ও ফ্রান্সের যৌথ কোম্পানি টিজিএস অ্যান্ড সস্নামবার্জার, জাপানের ইনপেক্স করপোরেশন ও জোগম্যাক, চীনের সিনুক, সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি এবং ভারতের ওএনজিসি আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এর মধ্যে সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপের তথ্য কিনেছিল শেভরন, এক্সনমবিল, ইনপেক্স, সিনুক ও জোগোম্যাক। শেষ পর্যন্তু তাদের কেউ আসেনি দরপত্রে। ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। এরপর তিন বছর সময় নিয়ে নতুন পিএসসি-২০২৩ চূড়ান্ত করা হয়। সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপ চালিয়ে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় বিদেশি কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছিল। দরপত্রে অংশ নিতে ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর আগে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। দরপত্র আহ্বানের পর গত মে মাসে একটি সেমিনার আয়োজন করে পেট্রোবাংলা। এতে ১৫টির বেশি আন্তর্জাতিক কোম্পানি অংশ নেয়। সমুদ্রে ১২ হাজার কিলোমিটার লাইন এলাকায় টিজিএস ও সস্নামবার্জার মিলে পরিচালিত বহুমাত্রিক ভূকম্পন (টুডি) জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয় সেমিনারে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলেন, গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ৯টি বস্নকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবার আগের চেয়ে বেশ কিছু সুবিধা বাড়ানো হয়। এবারের দরপত্রে দেশের স্বার্থের পাশাপাশি বিনিয়োগকারী কোম্পানির স্বার্থও দেখা হয়েছে। ফলে এবারের দরপত্র নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন তারা। গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি মিলে মোট ২৬টি বস্নক আছে বঙ্গোপসাগরে। এর মধ্যে ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে দুটি বস্নকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা দ্বিমাত্রিক জরিপ চালালেও পরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া একইভাবে চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। এখন একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দুটি বস্নকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি।