পৌষ মাস না এলেও ইতোমধ্যে শীত জেঁকে বসেছে দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোয়। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম-সিলেট এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যায় -ফোকাস বাংলা
প্রকৃতিতে এখনো পৌষ মাস না এলেও ইতোমধ্যে শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের জেলাগুলোতে। এর মধ্যে সোমবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিন, রাজশাহীতে ছিল মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। চারিপাশ কুয়াশায় ঢাকা ছিল। বৃষ্টির মতো কুয়াশাও ঝরেছে। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। এদিন রাজশাহীর তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পঞ্চগড়ের স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন
\হধরেই সকাল থেকে পুরো এলাকা কুয়াশায় ছেড়ে যায়। তবে বেলা বাড়তে থাকলে তাপমাত্রাও কিছুটা বাড়তে থাকে। আবার সন্ধ্যা থেকে ঠান্ডা বাড়তে থাকে। তবে দুই দিন ধরে ভোরে কুয়াশা না থাকলেও হিমেল বাতাসে অনুভব হচ্ছে বরফের শীত। তাপমাত্রা কমে আসায় কনকনে শীতের প্রকোপে জর্জরিত হয়ে পড়েছে মানুষ। গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষগুলো খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
সবজি চাষি আজমির জানান, 'ভাই খুবই ঠান্ডা। রাত-ভোর পর্যন্ত বরফের মতো লাগে। এত ঠান্ডা, কাজ কাম করা খুবই কঠিন হয়ে উঠে। ভোরে পালং শাক, লাফা শাক ও লাউ শাক তুলতে এসেছি। ধরা যাচ্ছে না, বরফের মতো মনে হচ্ছে। হাত অবশ হয়ে আসে। কিন্তু কী করব, টাটকা সবজি বাজারে নিতেই কাজ করতে হচ্ছে।'
পঞ্চগড়ের প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ বলেন, 'রোববারের চেয়ে তাপমাত্রা আরও কমেছে। তাপমাত্রা কমে গত ১০ ডিগ্রির ঘরে এসেছে। সোমবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত রোববার সকাল ৯টায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। শনিবার রেকর্ড হয়েছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।'
এদিকে, শীতের কারণে জেলায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। জেলার আধুনিক সদর হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শীতজনিত বিভিন্ন রোগী। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, সোমবার সকালে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই রাজশাহীতে সকাল-বিকালসহ রাতের তাপমাত্রা কম ছিল। তবে ঝলমলে রোদ ছিল।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক রহিদুল ইসলাম বলেন, 'হঠাৎ তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন। রোদ না ওঠায় শহরে মানুষের আনাগোনাও কমেছে। যারা বের হয়েছেন, মোটা ও গরম কাপড় পরে এসেছেন।'
নগরের চৌদ্দপায় এলাকায় চায়ের দোকানে জড়সড় হয়ে বসে ছিলেন কয়েকজন ডাব বিক্রেতা। তারা সেখান থেকে ডাব কিনে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। আমজাদ হোসেন নামের একজন বলেন, 'মনে হচ্ছে, আজ রোদ উঠবে না। ডাব কিনে ভুলই করলাম নাকি!'
নগরের তালাইমারী এলাকায় দিনমজুর রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি কাজের অপেক্ষায় ছিলেন ডালি ও কোদাল নিয়ে। তিনি বলেন, 'খুব ভোর থেকেই আজ কুয়াশা। এবারে মনে হচ্ছে প্রথম ঠান্ডা পড়ল। কাজ না পেয়ে চলে যাচ্ছি। এই ঠান্ডার মধ্যে কাজ পাওয়া কঠিন।'
নগরের কুমারপাড়া এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক জিতেন্দ্র সরকারের সঙ্গে। তার পরনে গরম কাপড়। তিনি জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন ভাড়া পাননি। মানুষ কম শহরে। শীতে একটু কমই মানুষ বের হয়। কয়েক দিন পর অভ্যস্ত হয়ে পড়লে হয়তো বের হবে মানুষ।
এদিকে শীত জেঁকে বসায় রাজশাহী নগরের মোড়ে ও ফুটপাতে শীতের কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। সাধারণত দুপুরের পর থেকে এসব জায়গায় বেচাকেনা শুরু হয়। তবে সোমবার সকাল থেকেই কাজে নেমে পড়েছেন বিক্রেতারা। নগরের রানীনগর এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কম্বল নিয়ে বসেছেন সাজু আহমেদ। তার মতো সেখানে আরও কয়েকজন বিক্রেতা রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে বেচাবিক্রি হচ্ছিল।
সাজু বলেন, 'শীত পড়ে গেছে। এখন বিক্রিও বেড়ে যাবে। তার দোকানে ১৫০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার দামের কম্বল রয়েছে।'
সেখানে কম্বল কেনার জন্য দেখছিলেন খুরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, 'বাড়ি থেকে পাঠাল শীতের কিছু কিনতে। দেখি কিছু কিনতে পারি কি না।'