'পার্বত্য জেলা পরিষদ ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস -ফোকাস বাংলা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সম্পদে পরিপূর্ণ পার্বত্য জেলাগুলো বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত অঞ্চল হতে পারত, কিন্তু সেগুলো এখনো সবচেয়ে পেছনে পড়ে আছে- এমন আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'এটা হওয়ার কথা না। আপনাদের ফসল, ফল-ফলাদি, ঐতিহ্যবাহী পণ্য দিয়ে অর্থনীতিতে আপনাদের এগিয়ে যাওয়ার কথা। পার্বত্য এলাকাগুলো দুর্গম, সেজন্য যোগাযোগ করা কঠিন হয়। আর এ কারণেই সেখানে প্রযুক্তির প্রসার দরকার। প্রযুক্তি দিয়ে এই দূরত্ব জয় করা যাবে।' শিক্ষা, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিকভাবে পার্বত্য অঞ্চলকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর দেন তিনি।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের জন্য আয়োজিত 'পার্বত্য জেলা পরিষদ ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
নারী ফুটবল টিমে পার্বত্য জেলা থেকে আসা খেলোয়াড়দের সঙ্গে বৈঠকের স্মৃতিচারণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের টিমকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আপনাদের এলাকার মেয়েরা কী দুর্দান্ত খেললো! কীভাবে বলবেন পিছিয়ে আছে? যারা আপনাদের এলাকা থেকে এসেছে, তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কী কঠিন পরিস্থিতি! কত কষ্ট করে পাহাড় ভেঙে বাড়ি পৌঁছাতে হয়! বাবা-মা ঢাকায় আসলে, কত কষ্ট করে তাদের আসতে হয়! এই প্রতিকূলতার মধ্যেই কিন্তু তারা বিশ্বজয় করে এসেছে।'
পার্বত্য এলাকার তরুণরা যেন বিশ্ব নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে- এই আশাবাদ জানিয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, 'আপনাদের মেয়েরা ফুটবলে বিশ্বজয় করে এনে দিয়েছে। তরুণদের শুধু বাংলাদেশের নাগরিক না, বিশ্ব নাগরিক হতে হবে। দুর্গম এলাকা বলে পিছিয়ে থাকলে হবে না। সীমাবদ্ধতা থাকবে, কিন্তু মনের সীমারেখাকে বাড়িয়ে দিতে হবে। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে নিজ কৃতিত্ব দিয়ে পৌঁছে যেতে হবে।'
জানুয়ারিতে তারুণ্যের উৎসবে পার্বত্য অঞ্চলের তরুণদের অংশ নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'আপনাদের শিশুদের, তরুণদের এ উৎসবে যোগ দিতে উৎসাহ দিন। স্থানীয় খেলা হোক, রচনা প্রতিযোগিতা, গান-নাচ তারা যা পারে, যা চায় তা নিয়ে যেন অংশ নেয়। এটা সবার উৎসব। উৎসবটি বৈচিত্র্যময় হোক। সরকারি নির্দেশ তাই অংশ নেবে এরকম না। তাদের আপনারা উৎসাহ দিন, যেন নিজ থেকেই তারা উদ্যমী হয়ে এই উৎসবে অংশ নেয়।' পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও সঠিক পদ্ধতি, প্রশিক্ষণের গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, 'দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক কঠিন সংকটে আছে। আপনাদের অঞ্চলে এটা আরও বেশি কঠিন। শিক্ষকদের কষ্ট হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট হয়। অনিয়মের পরিমাণ সারা বাংলাদেশে আছে, আপনাদের অঞ্চলে আরও বেশি করে আছে। আপনাদের পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হতে হবে। আমরাও চেষ্টা করবো রাষ্ট্রীয় দিক থেকে কীভাবে কী করা যায়। পার্বত্য জেলার তরুণরা দুর্গম অঞ্চলে আছে বলে বড় শহর থেকে লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকবে সেটা হতে দেওয়া যাবে না। লেখাপড়ায় তাদের এগিয়ে যেতে হবে।'
'জাপানের পূর্ণ সমর্থন আছে' :এদিকে, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি জাপানের পূর্ণ সমর্থন আছে এবং থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভু্যত্থানের পর জাপানের একটি কোম্পানিও বাংলাদেশ থেকে সরে যায়নি।
বুধবার রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্কের তিনটি ভিত্তি সুদৃঢ় করবে, যার মধ্যে
রয়েছে শান্তি ও স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং মানব-মানবিক মিথস্ক্রিয়া। আমরা তিনটি ভিত্তিকে সমর্থন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। পাশাপাশি নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্র্বর্তী সরকারের নেওয়া নানা সংস্কার উদ্যোগে টোকিওর 'দৃঢ় সমর্থন' পুনর্ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত।
প্রধান উপদেষ্টাকে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমান সরকারের নেওয়া সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করবে জাপান। পাশাপাশি সে দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা চালিয়ে যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে তাদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি দুই দেশের সম্পর্কের প্রশংসাও করেন। সম্পর্ক সবসময় খুব শক্তিশালী ছিল বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার দেশে আরও বেশি বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করছে।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি আমাদের জন্য একটি ভালো বার্তা দেয়।
জাপানের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা ইসু্যতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, টোকিও এই বৈঠককে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
\হপ্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে একটি জাতিসংঘ-গ্যারান্টিযুক্ত নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন, যেখানে সংঘাত শেষ হয়ে গেলে বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গা সম্প্রদায় তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হতে পারে।
বৈঠকে এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সরকারের সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।