ভেড়ামারায় পুলিশের মারধরে চা দোকানি মৃতু্যর অভিযোগ
প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কুষ্টিয়া ও ভেড়ামারা প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার চন্ডিপুরে রফিকুল ইসলাম দুদু (৫০) নামে এক চা দোকানিকে থানা পুলিশ মারধর করার পর হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী ও তার পরিবার। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে আটক তিন পুলিশ সদস্যকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার করে ভেড়ামারা থানায় সোপর্দ করেছে। এই ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধরা এলাকাবাসী। নিহত রফিকুল ইসলাম দুদু ভেড়ামারার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মন্ডলের ছেলে।
নিহতের পরিবারের ভাই ও চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে দুদুকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সে যেতে না চাইলে পুলিশ তাকে মারধর করে। পুলিশের মারধরে তিনি মারা যান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। মোস্তাক বলেন, 'আমার ভাই রফিকুল কোনো মামলার আসামি নয়। মামলার কোনো ওয়ারেন্টও দেখাতে পারেনি পুলিশ। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।'
দুদুকে ব্রিজ থেকে ফেলে মেরে ফেলার অভিযোগে জনতার হাতে আটক তিন পুলিশ সদস্যকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদগ্রামের চন্ডিপুর ৪ নম্বর ব্রিজের কাছে তার চায়ের দোকান রয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভেড়ামারা থানা পুলিশের এসআই সালাউদ্দীন ফোর্স নিয়ে ওই এলাকায় অভিযানে যান। এ সময় পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ব্রিজ থেকে রফিকুল
লাফ দেন। পুলিশ ধাওয়া করে তাকে আটক করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা লোকজন পুলিশের কারণেই তার মৃতু্য হয়েছে এমনটা অভিযোগ করে পুলিশকে তাড়া করেন। তারা তিন পুলিশ সদস্যকে আটক করে বাজারের একটি দোকানে আটকিয়ে রাখেন। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল।
নিহতের বড় ভাই বিসারত ইসলাম বলেন, 'আমার ভাইকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পুলিশ পিটিয়ে ও ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পুলিশ কেন আমার ভাইয়ের সাথে এমন করলো তা জানতে চাই। তিন পুলিশ জনতার রোষে মারা যেতে পারতো। আমরা আগলে রেখেছি। কারণ আমার ছেলে ও ছেলের বউ পুলিশ আমার ভাইয়ের ছেলে পুলিশ। আমরা পুলিশ পরিবার। অথচ এই পুলিশ আমার ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। আমি আমার ভাই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।'
স্থানীয় মমিন বলেন, 'দুদু ভালো মানুষ। তার বিরুদ্ধে মামলাতো দূরের কথা কোনো অভিযোগ নেই। পুলিশ তাকে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই। দুদু যদি ভালো মানুষ নাই-ই হবে, তবে তার নিহতের ঘটনায় এত মানুষ কেন পুলিশকে অবরোধ করে রাখবে? বিচার চাইবে?'
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান বলেন, 'একজনকে ব্রিজের উপরে মারধর করতে দেখি। এগিয়ে গেলে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাধা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে সেখান থেকে ব্রিজের ১০ ফুট নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে ব্রিজের নিচে এক পুলিশ নিহতের রক্তাক্ত মরদেহের জামার কলার ধরে বসানোর চেষ্টা করেন। আমরা রফিকুল ইসলাম দুদুর চেহারা দেখে পরিচয় জানতে পারি। এরপরেই বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের এসআই সালাউদ্দিনসহ দুই পুলিশকে আটক করে স্থানীয় জনতা। এ সময় অপর তিন পুলিশ পালিয়ে যান।'
চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন বলেন, দুদু নিরপরাধ। এ ঘটনায় জনতার রোষে তিন পুলিশের জীবন বিপন্ন হতে পারতো। আমি ও নিহতের ভাই দ্রম্নত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিই। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম আসেন। তিনিসহ অনেকে মিলে তিন ঘণ্টা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী ও বিজিবি এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। গ্রামবাসীর একটিই দাবি এ হত্যায় জড়িত পুলিশদের উপযুক্ত বিচার হোক।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, রফিকুল ইসলাম দুদুকে হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃতু্যর আসল কারণ জানা যাবে।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, পালাতে গিয়ে আসামির মৃতু্য হয়েছে। স্থানীয়রা তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটক করে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় আটককৃত ৩ পুলিশকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার করে ভেড়ামারা থানায় সোপর্দ করেছে।
মিরপুর-ইবি থানার সার্কেল ও ভেড়ামারার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, অপরাধ যেই করুক তার শাস্তি হবে। সকল নাগরিকের জন্য একই আইন সে পুলিশ হোক আর যেই হোক। এ ঘটনার অপরাধীদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।