৭ খুনের প্রতিবাদ

নৌযান ধর্মঘটে বন্ধ পণ্য খালাস পথে আটকা ১০ লাখ টন

হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও কারণ উদঘাটন অপরাধীদের গ্রেপ্তার, নৌপথে নিরাপত্তা এবং নিহত প্রত্যেককে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে এই ধর্মঘট

প্রকাশ | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে প্রায় অচল সারাদেশের নদীবন্দরের কার্যক্রম -ফোকাস বাংলা
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সারা দেশে নৌযান শ্রমিকরা লাগাতার ধর্মঘট পালন করছেন। এ কারণে বন্দরে বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে; চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙরে ২০টি বড় জাহাজে আটকা পড়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ টন আমদানি পণ্য। আর বর্হিনোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন নৌপথে যাওয়ার সময় আটকে আছে ৭৭০টির মতো লাইটারেজ জাহাজ, যেগুলোতে রয়েছে ১০ লাখ টনের মতো বিভিন্ন পণ্য। বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, 'লাইটারেজ জাহাজটিতে সাত হত্যাকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত কারণ উদঘাটন, অপরাধী যারাই হোক তাদের গ্রেপ্তার, নৌপথে সার্বিক নিরাপত্তা এবং নিহত প্রত্যেককে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে আমরা এই ধর্মঘট করছি।' দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি চলবে বলেছেন তিনি। তবে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান এ কর্মবিরতির আওতামুক্ত আছে। সোমবার বিকালে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে এমভি 'আল বাখেরা' জাহাজ থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় গুরুতর আহত আরও তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার জেরে নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও তুলেছেন নৌযান শ্রমিকরা। তাদের দাবি আদায়ের ধর্মঘটে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা ও বরিশাল বন্দরে পণ্য উঠানো নামানো বন্ধ আছে। পথে আটকা ৭৭০ জাহাজ বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অবস্থানরত ২০টি মাদার ভ্যাসেলে (বড় আকারের জাহাজ) রয়েছে মটর, মসুর ডাল, গম, সয়াবিন বীজ, সার, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য। প্রায় সাড়ে চার লাখ টনের মতো এসব আমদানি পণ্য পণ্য লাইটার বা ছোট জাহাজে খালাস হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, 'এসব জাহাজে পণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও বন্দরের মূল জেটিতে কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। বর্হিনোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ থাকা মানে বড় জাহাজগুলোর অপেক্ষমান সময় বাড়ছে, তাতে করে ওইসব জাহাজের অপারেটিং কস্টও বাড়ছে। এর সামগ্রিক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ে।' চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটেও পণ্য খালাস বন্ধ আছে। বিভিন্ন লাইটারেজ জাহাজ পণ্য বোঝাই করে বসে আছে। লাইটারেজ জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী বেসরকারি বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো অর্ডিনেশন সেলের (বিডবিস্নউটিসিসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন নৌরুট ও ঘাটগুলোতে পণ্য বোঝাই করে এবং পণ্য নিয়ে বিভিন্ন নৌ গন্তব্যে যাওয়ার পথ্য আটকে আছে ৭৭০টির মতো লাইটার জাহাজ। এসব জাহাজে ১০ লাখ টনের মতো বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ডিজি কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, 'নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে রোববার নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার জন্য আহবান জানিয়েছি। তাদের দাবি পূরণের বিষয়ে কথা বলে দ্রম্নত ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধও করেছি।' মোংলায় পণ্য উঠানো নামানো বন্ধ মোংলা বন্দরে বহির্নোঙরে অবস্থান নেওয়া জাহাজে পণ্য নামানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে এতে তেমন প্রভাব এখনো পড়েনি বলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বন্দরে বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে ধর্মঘটে রয়েছে বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনটির মোংলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, 'মালবাহী, তেল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সব প্রকার পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই ধর্মঘট চলবে।' বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের মোংলা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন হাওলাদার বাদশা বলেন, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কখনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, 'নৌরুটে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।' মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ পরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, 'মোংলা বন্দরের জেটিতে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ নেই। তবে বন্দরের বর্হিনোঙরে ১৪টি দেশি বিদেশী জাহাজ অবস্থান করছে। এর মধ্যে চারটির পণ্য নামানোর কাজ বৃহস্পতিবার রাতেই শেষ হয়ে যাওয়ায় শনিবার সকালে তা ছেড়ে যাবে।' পায়রা ও বরিশাল বন্দরেও অচলাবস্থা পায়রা বন্দরের বাইরে ও ভেতরে থাকা 'মাদার ভ্যাসেল' ও 'লাইটারেজ জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। পায়রা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের উপ পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, 'এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাত খুনের রহস্য উন্মোচন ও কিছু দাবি-দাওয়ায় তোলে বন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রে?খে?ছেন শ্রমিকরা।' বরিশাল বন্দরে মালবাহী, তেল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশালের সিনিয়র সহসভাপতি একিন আলী মাস্টার।