স্থায়ী কমিটির বৈঠক

অন্যায্য কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে সতর্ক বিএনপি

প্রকাশ | ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যায্য কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার আভাস পাচ্ছে বিএনপি। রাজনৈতিক দলগুলোকে মাইনাস করে নানা কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশে এক ধরনের 'অরাজকতা' তৈরির চেষ্টা করছে বলে মনে করছে দলটি। তবে এ ব্যাপারে যে কোন রাজনৈতিক অপচেষ্টা রুখতে দলটিতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক মনিটর করছেন। পাশাপাশি সোর্সও সক্রিয় রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতারা চলমান রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির নেতাদের মতে, অরাজকতা সৃষ্টির জন্যই ছাত্রদের এই পস্ন্যাটফর্ম থেকে এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবি তোলা হয়েছিল। কারণ সেটা হলে দেশে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতো। এরই ধারাবাহিকতায় বাহাত্তরের সংবিধান পরিবর্তনের দাবিতে তারা রাজধানীতে 'জুলাই বিপস্নবের ঘোষণাপত্র' দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোকে আমলে না নিয়ে 'কর্তৃত্ববাদ' প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তারা এই কাজে অগ্রসর হয়েছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'জুলাই বিপস্নবের ঘোষণাপত্র' দেওয়ার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির। তবে এর আগে সোমবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভু্যত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির কথা বলা হয়। পরে ওইদিন রাতেই সরকারের এই উদ্যোগকে 'সময়োপযোগী' আখ্যা দিয়ে এটাকে সাধুবাদ জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একইসঙ্গে মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'মার্চ ফর ইউনিটি' কর্মসূচি ঘোষণা করে, যেটা পালিত হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার তাদের এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে দেশের উত্তরণ ঘটিয়েছে। জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্র নেতাদের 'জুলাই বিপস্নবের ঘোষণাপত্র' নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সাক্ষাতের বিস্তারিত তুলে ধরেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রমতে, গত রোববার রাতে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মির্জা ফখরুল। সাক্ষাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে ছাত্ররা এককভাবে জুলাই বিপস্নবের ঘোষণাপত্র দিলে দেশে যে বিশৃঙ্খলা-সংকট তৈরি হবে, সেই শঙ্কার কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান তিনি। একই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পস্ন্যাটফর্মের নেতারাও 'ঘোষণাপত্র নিয়ে' বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিএনপির বৈঠকে এ দিন একটিই এজেন্ডা ছিল, ছাত্রদের 'জুলাই বিপস্নবের ঘোষণাপত্র' দেওয়ার নতুন উদ্যোগ। ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় বিএনপি নেতারা এই প্রসঙ্গ নিয়ে নানামুখী অভিমত ব্যক্ত করেন। কেউ কেউ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পস্ন্যাটফর্মের এই নতুন উদ্যোগের সঙ্গে দেশের গণমানুষ, রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত নয়। ছাত্ররা তাদের নিজেদের মতো করে বাংলাদেশের একটি চরিত্র দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। তারা যে সংবিধান বাতিল করে দেওয়ার কথা বলছে, সেই সংবিধানের আলোকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রের একটা কাঠামোগত অবস্থান আছে। বাহাত্তরের সেই সংবিধান বাতিল করে দেওয়া হলে দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং সেই পরিস্থিতি জুলাই গণঅভু্যত্থান এবং জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করে দিতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পেছনে ব্যাকিং কারা, কাদের পৃষ্ঠপোষকায় তারা এসব কর্মকান্ড করছে- স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির কেউ কেউ সেই প্রশ্নও তোলেন। বিএনপির মূল্যায়ন হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনের এসব উদ্যোগের দৃশ্যমান কোনো পৃষ্ঠপোষক তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই; জামায়াতে ইসলামী জড়িত কিনা, সেটাও তাদের কাছে স্পষ্ট নয়।