স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন করার পক্ষে নির্বাচন কমিশন অবস্থান তুলে ধরেছে। রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রায় তিন ঘণ্টা সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ বলেন, কমিশনের সামগ্রিক ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। সেদিকে এগোচ্ছেন তারা।
১৪তম নির্বাচন কমিশনের দ্বিতীয় সভায় আগামী জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। 'বেশির ভাগ মানুষ চান আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক', নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদের এমন বক্তব্য দেওয়ার পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
শনিবার জাতীয় নাগরিক কমিটি গণঅভু্যত্থানের পর স্থানীয় সরকার কাঠামো 'ভেঙে পড়ায়' নাগরিকরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে মন্তব্য করে বলেছে, 'এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে।'
তার আগে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মানবেন না তারা।
এমন প্রেক্ষাপটে রোববার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কমিশন সভা হয়। এতে চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ সাংবাদিকদের সামনে আসেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমাদের সামগ্রিক ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। কমিশন জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলে অপরাপর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে। ৃএমন কোনো ইভেন্ট আসা ঠিক হবে না যেটা জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনকে ব্যহত করে। এমন অবস্থায় আমি নিশ্চিত, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকার, সকল পক্ষে এগুলো বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা বাস্তবায়ন করবো। তাতে যদি সরকার মনে করে কিছু নির্বাচন আগে করাবেন তাহলে আমাদেরকে সেভাবে করতে হবে। তবে আমাদের অবস্থান হচ্ছে মূলত- ওই জায়গাটাতে বলছি, সব নির্বাচন একসাথে করা সম্ভব নয়। সব স্থানীয় নির্বাচন একসাথে করা সম্ভব নয়।'
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাঁচ মাস পার হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দল ও নানা মহল থেকে জোর তাগাদাও আসছে।
সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ভোট করার পরিকল্পনাও জানানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিইসি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন যে পত্রপত্রিকায় দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ একই সঙ্গে সব নির্বাচন করার বা সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। কমিশন এ নিয়ে আলোচনা করেছে। কারণ, কমিশনকে নির্বাচন করতে হবে।
পরে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা সকল অনুবিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে যেটা বুঝতে পেরেছি- এটা আসলে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নয়, সম্ভব নয়।'
এক প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ বলেন, 'এখনও পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে আলোচনা করেছি। যেহেতু এটা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে। যাতে করে আমরা আমাদের অবস্থানটাও তুলে ধরতে পারি।'
নির্বাচনে ইসির কর্মযজ্ঞ, সুবিধাজনক প্রস্তুতির বিষয়ে কত সময় লাগতে পারে তার একটা ধারণাও দেন এ নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, 'তবে শুধুমাত্র নির্বাচনটা নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাস্তবতা হচ্ছে, একটা সংস্কার কমিশন কাজ করছে। তাদের প্রস্তাব সামনে আসবে। এটাকে ধারণ করে আইন-বিধিমালায় কোনো সংশোধন দরকার হলে সেটা করতে একটা টাইম আছে।'
দেশের আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ফলে জাতীয় নির্বাচন করতে হলে কমিশনকে কিছুটা সময় দিতে হবে।
হালনাগাদের লক্ষ্যে ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের কাজও আনুষ্ঠনিকভাবে উদ্বোধন করবে ইসি।