চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ পাঁচজন খালাস পেয়েছেন। পাশাপাশি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ পাঁচজনের সাজা কমানো হয়েছে।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
ওই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে ১৪ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। পরেশসহ পাঁচ আসামির সাজা কমেছে হাইকোর্টের রায়ে। এর আগে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় গত ১৮ ডিসেম্বর মৃতু্যদন্ড থেকে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন খালাস পান।
খালাস পেলেন বাবরসহ পাঁচজন
লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়া খালাসপ্রাপ্ত অপর চারজন হলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন।
রায়ের পর লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, কোর্ট বলেছেন, আজকে (মঙ্গলবার) একটি অ্যাডভান্স অর্ডার সই করে দেবেন। আমি আশা করি আজকেই এই আদেশ পৌঁছানো হবে এবং দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। বাবর কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। তিনি বলেন, এই মামলায় ১৪ জনের সাজা হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচজন খালাস পেয়েছেন। পাঁচজনের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন। মৃতু্যজনিত কারণে চারজনের আপিল বাদ হয়ে গেছে। অর্থাৎ নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
নিজামীসহ মৃত চারজনের আপিলের পরিসমাপ্তি
মারা যাওয়ার কারণে চারজনের আপিল অ্যাবেট (পরিসমাপ্তি) ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। তাঁরা হলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ ও ট্রলারমালিক হাজি সোবহান।
পরেশসহ পাঁচজনের সাজা কমল
বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৪ জনের মধ্যে পরেশ বড়ুয়াসহ পাঁচজনের সাজা কমানো হয়েছে। পরেশ বড়ুয়ার সাজা এখন ১৪ বছর করা হয়েছে। আর চার আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। তাঁরা হলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার তৎকালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ ও হাফিজুর রহমান।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইবু্যনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ হয় একই আসামিদের।
আদালতে আসামি পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, মোহাম্মদ আহসান প্রমুখ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান।