প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক

জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরিতে ঐকমত্য

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে জুলাই ঘোষণা নিয়ে মত বিনিময় করেন -পিআইডি
জুলাই গণঅভু্যত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সব দলের অবদান অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সর্বসম্মতিক্রমে এই ঘোষণাপত্র তৈরিতে তাড়াহুড়ো করা ঠিক বলে না বলেও মত এসেছে। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের বৈঠকে এই ঐকমত্য হয়েছে বলে সব দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে সরকার গঠনের সাড়ে ৫ মাস পর এই ঘোষণাপত্রের প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব দল এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দরকার বলে মনে করছে। সভায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ জুলাই গণঅভু্যত্থানের সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। বৈঠকের মাধ্যমে এই ঘোষণাপত্র তৈরি নিয়ে গত মাস খানেক ধরে যে উত্তেজনা চলছিল তা আপাতত কমল বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, 'জুলাই গণঅভু্যত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সবাই বলেছেন এই ধরনের একটা ঘোষণাপত্র করার প্রয়োজন আছে।' তিনি বলেন, মোটাদাগে ঘোষণাপত্রে সবার অবদান বলতে হবে, ধারাবাহিকতা উলেস্নখ করতে হবে। ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক ও আইনগত ভিত্তি কী হবে সেটাও স্পষ্ট করতে হবে। আসিফ নজরুল বলেন, 'জুলাই গণঅভু্যত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি ও ছাত্র-জনতাসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে এই ঘোষণপত্র প্রনয়ণ করতে হবে। এটার জন্য যত সময় প্রয়োজন সময় নেওয়া যেতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো এও বলেছে অযথা কালবিলম্ব যেন না হয়। সবাই ঐক্যমত হয়েছে আরো নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই ধরনের ঘোষণাপত্র হওয়া উচিত। সবাই আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন এই প্রক্রিয়ায় আমরা সফল হব। জুলাই গণঅভু্যত্থানে সবাই একত্রিতভাবে ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি, তেমনি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে পারব।' সময়সীমা নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সংগঠনের যারা অংশ নিয়েছে সবাই বলেছে- ঐক্যমত পোষণ করে সর্বোসম্মতিক্রমে একটি ঘোষণা পত্র তৈরির জন্য। যত সময় লাগুক তা যেন নেওয়া হয়। তাড়াহুড়ো যেন না করা হয়। অযথা কালক্ষেপণ না করা হয়। এই লক্ষ্য অনেকে প্রস্তাব করেছে আলোচনা করে একটি কমিটি গঠন করার জন্য। এই প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে দ্রম্নত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' ঘোষণা পত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। শুধু কি পদ্ধতিতে করা হবে, বিভিন্ন রকম মতামত এসেছে। কোথাও অনৈক্যর সুর নেই। সবাই বলেছে, ঘোষণা যেন সবার মালিকানা থাকে।' এর আগে গত ৩১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গণঅভু্যত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিলেও বিএনপির আপত্তির কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। এরপর সরকার এই ঘোষণাপত্র দেবে বলে জানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকালকের এই বৈঠক হল। নাগরিক কমিটি সব রাজনৈতিক দল ঐক্যমত বলে জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে অতিদ্রম্নত সময়ের মধ্যে কিছু পর্যালোচনাসহ প্রকাশ হবে। এরমধ্যে কিছু দৃষ্টিভঙ্গিগত ও শাব্দিক চয়নে সকলের আলোচনার প্রয়োজন। সেটার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে সময় চেয়েছেন। তিনি দলগুলোর সময়ক্ষেপনের বিষয়ে লক্ষ রাখতে বলেছেন, যাতে কালবিলম্বও না হয়, আবার যেন দ্রম্নতগতিতেও না হয়ে মাঝামাঝি সময়ে ঐক্যমতে পৌঁছে সুন্দর একটি জিনিস প্রকাশ করতে পারি সে বিষয়ে সবাই ঐক্যমত হয়েছি। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণ হতে এ দলিল ছাড়া সম্ভন নয় বলে মনে করেন নাসিরুদ্দীন। আলটিমেটাম দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সকলেই একটা পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে রয়েছি। আলটিমেটামের কথা এসেছিল কিন্' নির্দিষ্ট করে আলটিমেটাম হয়নি। তবে এটা সম্মত হয়েছি দেরিও নয়, আবার তাড়াহুড়ো নয়, খুব দ্রম্নত সময়ের মধ্যে পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রকাশ করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, গণঅভু্যত্থানের অংশীজন মিলে আমরা ঐক্যমতে পৌছাতে পেরেছি। সব দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হবে, এটা এখন নিশ্চিত। পরবর্তী ধাপে আলোচনা হবে ঘোষণাপত্রে কী কী থাকবে। এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ঘোষণাপত্র নিয়ে আমরা একটি লিখিত পরামর্শ দিয়েছি। ঐতিহাসিক দলিল তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়। আমাদের প্রক্রিয়ায় একমত হওয়া দরকার। কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গণঅভু্যত্থানের ফরমান লিখিত হবে। সকল দল তা সম্মতির ভিত্তিতে গ্রহণ করবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মতো। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্র তৈরিতে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা অন্যকোন কমিটি বা কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে দেওয়া হয়েছে। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি জুনাইদ আল হাবিব বলেন, ঘোষণাপত্রে ২০১৩ সালের শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যার বিষয় সংযোজন করতে হবে। পাখির মত গুলি করে ওলামায়ে কেরামকে হত্যা করা হয়েছে, হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামকে গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর জেলখানায় বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে, সেটাও এখানে উলেস্নখ থাকতে হবে। ঘোষণাপত্র তৈরিতে তাড়াহুড়া ও যেনতেন প্রক্রিয়া যেন না করা হয় বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, এটা যেন তাড়াহুড়া করে, যেনতেন প্রক্রিয়া না করা হয়। ঘোষণাপত্র তৈরির জন্য সরকারের দিক থেকে এই উদ্যোগটা নেওয়া দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে একটি ড্রাফ কমিটি করা দরকার জানিয়ে সাকি বলেন, ড্রাফ কমিটি শিক্ষাথী, রাজনৈতিক দলসহ সকল অংশীজনদের মতামতকে যুক্ত করে প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে দলিলটি তৈরি করতে হবে।