ভারত-নেপাল নতুন চুক্তি
বাণিজ্য কতটা সহজ করবে বাংলাদেশ?
প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সড়কপথে বাণিজ্য কার্যক্রম বাড়াতে ও সহজতর করতে দিলিস্ন এবং কাঠমান্ডুর ঊর্ধ্বতন বাণিজ্যিক কর্মকর্তারা সম্মত হয়েছেন বলে দুই দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ব্যবসায়ী এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির পর, ভারতীয় রুট দিয়ে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য 'অনেক সহজ হয়ে যাবে'। নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যেও বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, কাঠমান্ডু ও ঢাকার মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারিত ও ক্রমবর্ধমান হচ্ছে এবং এটি সামনে আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত ও নেপালের মধ্যে নতুন চুক্তির প্রেক্ষপট বিবেচনায় বাণিজ্য কতটা সহজ করবে বাংলাদেশ, সামনে এসেছে সেই বিষয়টিও। খবর: বিবিসি বাংলা
নেপালের জন্য, ভারতের পরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক সহযোগী। বলা হচ্ছে যে, নেপালের সমুদ্রপথের সাথে সরাসরি কোনো সংযোগ নেই তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশি বন্দরগুলো ভারতীয় বন্দরের বিকল্প হতে পারে।
চুক্তিতে কী আছে গত সপ্তাহে কাঠমান্ডুতে ভারত-নেপাল আন্তঃসরকার বাণিজ্য ও পরিবহন কমিটির (আইজিসি) দুই দিনের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। নেপাল থেকে এই বৈঠকের নেতৃত্ব দেন দেশটির শিল্প, বাণিজ্য ও সরবরাহ মন্ত্রণালয়ের সচিব গোবিন্দ বাহাদুর কার্কি, এবং ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়াল। উভয় দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে বৈঠকে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
এর মধ্যে নেপালের পূর্ব সীমান্ত কাকাড়ভিট্টা থেকে ভারতের ফুলবাড়ি হয়ে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা পর্যন্ত ট্রানজিট ব্যবস্থা সহজ করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'নেপালের অনুরোধে, ভারত ফুলবাড়ি থেকে কাকাড়ভিট্টা-বাংলাবান্ধা রুট দিয়ে "কার্গো-ইন-ট্রানজিট"-এর অনুমোদন দিয়েছে।'
এক্ষেত্রে ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী 'টু-এক্সেল' যানবাহনের জন্য সর্বোচ্চ 'এক্সেল' ওজন ১৮ দশমিক পাঁচ টন এবং 'থ্রি-এক্সেল' যানবাহনের জন্য সর্বোচ্চ ওজন ২৮ টন হতে পারবে। এতদিন কাকড়ভিট্টা থেকে বাংলাদেশে যাওয়া নেপালি ট্রাকের সর্বোচ্চ ওজন ১৯ টনের বেশি হতে পারবে না বলে বিধান ছিল।
নেপালি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা আশা করছেন যে নতুন ব্যবস্থাটি তাদের সম্মতি অনুযায়ী শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে।
এর সুবিধা কী?
বৈঠকে নেপালের পক্ষে নেতৃত্বদানকারী দেশটির বাণিজ্য সচিব কার্কি বলেছেন, এই চুক্তি নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও সহজ করবে।
তিনি বলেন, 'এটি এখন থেকে নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য অনেক সহজ করবে। আমরা আরো অনুরোধ করেছি, যাতে এই রুটে পরিবহন আরও সহজ করা যায়। আমরা এতেও ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।'
ন্যাফা'র (নেপাল ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নরেশ কুমার আগারওয়াল বলেছেন, এই চুক্তি দীর্ঘদিনের দাবির সমাধান করেছে। তিনি বলেন, 'এখন থেকে আমাদের (নেপাল) ট্রাক এবং ভারতীয় রাস্তায় ভারতীয় ট্রাকের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। আগে ভুটান এই ধরনের সুবিধা পেয়েছিল। আমরা বলছিলাম যে আমাদেরও একই সুবিধা থাকা উচিত।'
'এতে নেপাল থেকে রপ্তানি বা বাংলাদেশ থেকে আমদানির সময় পরিবহন খরচ কমবে। এর ফলে পণ্যের দাম কমবে, যার সুবিধা ভোক্তারাও পাবেন'- বলেন তিনি।
ফেডারেশন অফ নেপালিজ চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির অধীনে স্থল পরিবহন ও যোগাযোগ কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্যবসায়ী, প্রকাশ সিং কার্কি, বলেছেন যে নতুন চুক্তিটি বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সহজ করতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, 'এটা খুবই ইতিবাচক বিষয় যে আমাদের যানবাহনগুলো ভারতীয় যানবাহনের মতোই পণ্য পরিবহন করতে পারবে।'
নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য
নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাঠমান্ডু ও ঢাকার মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারিত ও ক্রমবর্ধমান হচ্ছে এবং এটি সামনে আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দেশটির বাণিজ্য ও রপ্তানি উন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশটি থেকে প্রধানত মসুর ডাল, বীজ, আমড়া, আদা, এলাচ, জুস এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়।
সম্প্রতি, নেপাল ভারতের রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামোর মাধ্যমে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদু্যৎ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং বিদু্যৎ রপ্তানিও শুরু করেছে। তবে, শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে, বর্তমানে নিয়মিত বিদু্যৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ থেকে নেপালে রপ্তানি হওয়া প্রধান পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, ওষুধ, বৈদু্যতিক পণ্য, পাটজাত পণ্য, আলু এবং অন্যান্য পণ্য। নেপালের কাস্টমস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে নেপাল থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৫৫ কোটি ৫০ লাখ নেপালি রুপির পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে ৪২২ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে।