বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচনই হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। আগামী নির্বাচন নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হলে তা পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।
শনিবার শিক্ষক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এই শিক্ষক সমাবেশ হয়।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, 'সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি বরাবরের মতোই আমার আহ্বান থাকবে, আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছড়ানো কিংবা বির্তক সৃষ্টির সুযোগ না পায়। সে বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'আমি শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার ২
\হমানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, পূঁথিগত বিধির ওপরে গণতন্ত্রের বিকাশ নির্ভর করে না। গণতন্ত্র বিকশিত এবং শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের কার্যক্রম, আচরণে এবং চর্চায়। আমাদের মধ্যে অবশ্যই ভিন্নমত-ভিন্নপথ থাকবে; এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমাদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন, আমাদের সবার উদ্দেশ্য একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।
তারেক রহমান বলেন, 'ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানে মাফিয়া প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিংবা বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে অযাচিত ভুল বুঝাবুঝির কারণে যাতে একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং সম্ভাবনা হুমকির মুখে না পড়ে এ ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।
নির্বাচন ও সংস্কার দুইটাই জরুরি
তারেক রহমান বলেন, সংস্কার এবং নির্বাচন দুইয়েরই পক্ষে বিএনপি। দুটিই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন- কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কুটতর্ক করার অপচেষ্টা করেছেন। দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি অন্যদিকে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। ফলে, দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছেও সংসার টেকানোই অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নিরব হাহাকার।'
তিনি বলেন, 'কিভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দর্শা লাঘব করা যায়; কিভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়; কিভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্টদের আমলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেয়া যায়; কিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা সম্ভব, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, অন্তবর্তীকালীন সরকারের সামনে অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি।'
সরকারের কেউ কেউ অন্য ইসু্যতে বেশি মনোযোগী
তারেক রহমান বলেন, 'জনগণ বিশ্বাস করে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের মতো সর্বজন সমর্থিত একটি নির্দলীয় অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া সহজ। তাহলে এখন প্রশ্ন অন্তবর্তীকালীন সরকার এতদিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। জনগণের ওপরে কেন উল্টো ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এখনো কেনো বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক- তাহলে কি সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইসু্যতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না।'
তবে তিনি এ-ও বলেন, 'অন্তবর্তীকালীন সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।;
তরুণরা নতুন দল করলে বিএনপি স্বাগত জানাবে
তারেক রহমান বলেন, 'দেশের ছাত্র-তরুণরা রাষ্ট্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এসব তরুণরাই গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত এসব তরুণদের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়, পথটি হওয়া উচিত স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক।'
অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি সময়ের অপচয়
তারেক রহমান বলেন, এই সরকারের সাথে কোনো ভুল বুঝাবুঝি অযথা কুট তর্ক সময়ের অপচয় বলে মনে করি। তবে একই সাথে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য্য ধরে মানতে পারে, মেনে নিতে পারে তাহলে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য্য ও সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি।'
শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় শিক্ষক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উলস্নাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহসানুল হক মিলনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।