অবশেষে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে ঢাকার সাত সরকারি কলেজ। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে।
সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান সরকারি সাত কলেজের অধ্যক্ষরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন উপাচার্য।
লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ বিষয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় ইতোমধ্যে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং ধৈর্যধারণ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'সোমবার দুপুরে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আমার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ৫টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।'
সিদ্ধান্তগুলো হলো- ১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২. অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে এ বছর থেকেই অর্থাৎ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি না নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
৩. শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, গত ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সভায় জোর সুপারিশ করা হয়। ৪. ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।
৫. যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান উপাচার্য।
এদিকে, নানা দাবিতে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার ঘটনা কয়েক বছর ধরেই চলছে। এবারের উদ্ভূত পরিস্থিতির সূত্রপাত রোববার সন্ধ্যার পর। সেদিন সন্ধ্যার পর পাঁচ দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও টেকিনিক্যাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন অধিভুক্ত সাত কলেজের
\হশিক্ষার্থীরা।
তাদের ভাষ্য ছিল, দাবি-দাওয়া জানাতে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু উপউপাচার্য আমাদের অপমান করেছেন। তার প্রতিবাদ জানাতেই সড়কে নেমেছেন তারা।
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের 'ফোকাল পার্সন' ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান সেদিন বলেন, 'উপউপাচার্যকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি ক্ষমা চাইলে আমরা সড়ক ছেড়ে দেব।'
এরপর রোববার রাত সোয়া ১১টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ের অবরোধ থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা কলেজের বিভিন্ন হল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। তারা নীলক্ষেত মোড় হয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে তারা উপউপাচার্যের বাসভবনে অভিমুখে রওনা হওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে তাদের এই অবস্থানের খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে লাঠি সোঁটা নিয়ে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে মধ্যরাতে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। ইট পাটকেল ছোঁড়াছুড়িও হয়। এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেইটের দিকে নিয়ে যায়।
পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও ধাওয়া দেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। মোতায়েন করা হয় চার পস্নাটুন বিজিবি। তারপরও রাতভর উত্তেজনা চলে দুই পক্ষের মধ্যে।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার দুপুরে জরুরি সভায় বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ও সাত কলেজের অধ্যক্ষরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদের কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে এই সভা হয়। সভার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে 'আলাদা' হওয়ার সিদ্ধান্ত জানান উপাচার্য।
এবার থানা ঘেরাও কর্মসূচি
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের
এদিকে, ঢাকা কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ রাকিবের ওপর হামলার অভিযোগে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। এসময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে থানা ঘেরাও করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. মুঈনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ঢাবির সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু আমাদের পাঁচটি দাবি এখনো রয়েছে এগুলো দ্রম্নত মানতে হবে। মোহাম্মদ রাকিবকে নির্মমভাবে মারা হয়েছে। এ হামলার পেছনে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন উদ্দীন ছাড়াও অনেকে জড়িত রয়েছেন। তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে নিউমার্কেট থানা ঘেরাও করবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মুঈনুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে আসার দায়ভার প্রো-ভোসি মামুন আহমেদকে নিতে হবে এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। দাবি না মানলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ঢাকা কলেজের সামনে দিয়ে চলতে দেওয়া হবে না।
'সাত কলেজ নিয়ে উচ্চমানের
বিশ্ববিদ্যালয় গঠন হবে'
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকছে না সরকারি সাত কলেজ। ২০২৪-২৫ সেশন থেকে ভর্তি পরীক্ষা নেবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাত কলেজকে নিয়ে উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয় গঠন হবে।
সোমবার বিকেলে ঢাকা কলেজে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কে এম ইলিয়াস এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মতামতের ভিত্তিতে দাঁড় করানো হবে নতুন এক কাঠামো।
অধ্যক্ষ বলেন, ৬ দফার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ছাত্রদের প্রস্তাবেই সব দাবির বিষয় সভাতে উত্থাপিত হয়। তবে সব দাবির সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।
অধিভুক্তি বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, সাত কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না। শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা বলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে এককাঠামো দাঁড় করানো হবে। যেখানে অধ্যায়ন করবে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা।
অধ্যক্ষ ইলিয়াস বলেন, সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে করা হয়েছিল তৎকালীন সরকারের আমলে। তবে এর সঠিক কোন মূল্যায়ন আমরা দেখতে পাইনি কিংবা কোনো প্রজ্ঞাপনও আমরা দেখিনি। আমাদের এখন যেটি মনে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন যারা ভিসি ছিলেন তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, যে সব সিদ্ধান্ত এসেছে তাতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট কিনা সেটা আলোচনা করে জানানো হবে।
উপ-উপাচার্যের সঙ্গে কী
হয়েছিল শিক্ষার্থীদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যর্ (শিক্ষা) মামুন আহমেদের সঙ্গে বাহাসের পর রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের একদল শিক্ষার্থী। পরে রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর নীলক্ষেত-নিউ মার্কেট এলাকায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অনেকে আহত হন। কিন্তু কেন এই সংঘর্ষ?
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেখানে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় 'অযৌক্তিক' কোটাপদ্ধতি বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি ছিল। সেই স্মারকলিপির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হলো, তা জানতে শিক্ষার্থীরা রোববার বিকেলে মামুন আহমেদের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন।
নিজের কার্যালয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদ 'দুর্ব্যবহার' করেন-এমন অভিযোগে শিক্ষার্থীরা রোববার সন্ধ্যায় সায়েন্স ল্যাব অবরোধ করেন। কার্যালয়ে কী ঘটেছিল, সেই ঘটনার পৌনে তিন মিনিটের একটি ভিডিও চিত্র রোববার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিডিওটি সেই ঘটনারই।
ভিডিওতে উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদকে বলতে শোনা যায়, 'পিস্নজ কিপ দিস ইন মাইন্ড, ইউ কান্ট ডু মবিং। আমি তোমাদের বলেছি দুজন আসতে। কেন বলেছি দুজন আসতে? কারণ, আমি তোমাদের কথাটা শুনতে চাই, হোয়াট ইজ ইয়োর প্রবলেম। বাট তুমি দলবল নিয়ে আমার রুমে ঢুকেছ এবং তুমি আমাকে বলেছ, আপনি অস্বীকার করছেন। পিস্নজ।'
তখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, 'সাত কলেজের কথা তো আমরা দুজন বলতে পারি না।' উত্তরে মামুন আহমেদ বলেন, 'কেন বলতে পারো না? তোমার যা বক্তব্য, রিপ্রেজেনটেটিভ (প্রতিনিধি) হিসেবে বলবা। ওকে?' এর জবাবে সাত কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'অন্য কলেজ তো মানবে না, স্যার।' মামুন আহমেদ তখন বলেন, 'কোনো কলেজ যদি না মানে, দ্যাট'স নট মাই বিজনেস। ওকে?'
এই পর্যায়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মামুন আহমেদকে বলেন, '...আপনিও কিন্তু স্যার অ্যাগ্রেসিভ (উত্তেজিত) হয়ে গেছেন।' জবাবে মামুন আহমেদ বলেন, 'অ্যাগ্রেসিভ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কেন বলছ যে আমি অস্বীকার করছি। অস্বীকার করার মানেটা কী, বলো।' এ সময় সাত কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আপনাকে যখন আমরা বলেছিলাম যে "স্যার, আমাদের জন্য বিশেষজ্ঞ টিমটা তো আছেই; আপনি হয়তো বুঝতে পারেননি বা যেকোনো কারণেই হোক আপনি বলেছেন কিসের কমিটি, আমি জানি না।' এ কথাটাই উনি (আরেক শিক্ষার্থী) বলতে চেয়েছেন।...কিন্তু স্যার, আপনি যেভাবে অ্যাগ্রেসিভ হয়ে গেলেন, এই আচরণটা কিন্তু খুব গ্রহণযোগ্য আচরণ না।'
সাত কলেজের এক ছাত্রীর এই কথার পর মামুন আহমেদ বলেন, 'অবশ্যই গ্রহণযোগ্য আচরণ।' শিক্ষার্থীদের দিক থেকে এ সময় আরও কয়েক লাইন বলার পর মামুন আহমেদ তাঁর চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে দুই হাত তুলে বলেন, 'সরি, আই এম নট গোয়িং টু টেল ইউ এনিথিং, আই এম স্যরি।' ওই ছাত্রী তখন বলেন, 'আপনার দায়িত্ব এটা, স্যার।' জবাবে মামুন আহমেদ বলেন, 'আমার দায়িত্ব তোমাদের কথা এভাবে শোনা না।'
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাহাসের একপর্যায়ে মামুন আহমেদ বলেন, 'তোমাদের কথা বারবার শোনার জন্য আমি এখানে বসিনি।' সাত কলেজের এক ছাত্র বলেন, 'উই আর ইয়োর স্টুডেন্টস, স্যার।' এ সময় ওই ছাত্রী বলেন, 'আমরা লিখিতভাবে দিয়েছি, লিখিত বিষয়টার কোনো ফলাফল পাইনি বলে আমরা আবার এসেছি। আমি এবং আরেকজন ছাড়া আমরা কেউ এখানে কথা বলিনি। আপনি বলছেন, আমরা এখানে মবিং করছি। এটা কোনো কালচার হলো, স্যার? আপনি এ রকম অ্যাগ্রেসিভ হয়ে গেছেন, এই আচরণ দেখে আমাদের কষ্ট হয়।'
এরপর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান কথা বলেন। তিনি মামুন আহমেদকে বলেন, 'স্যার, আমরা বলেছি, আমরা ৫ (জানুয়ারি) তারিখে যে স্মারকলিপিটি দিয়েছি, সেটা আপনি পড়েছিলেন কি না? আপনি বললেন, কোনটা দিয়েছি সেটা উলেস্নখ করতে। সেটা আমরা উলেস্নখ করলাম যে সিট কমানোরটা। আপনি জানেন, আমরা আর পারছি না। আমাদের এখানে মিলছে না দেখে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় বা যেকোনো একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে...।' এখানেই ভিডিওটি শেষ হয়ে যায়।
এদিকে রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে এক ভিডিও বার্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেন, 'গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার অফিসে আলোচনাকে কেন্দ্র করে রাতে যে অনাকাঙ্িক্ষত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, তা দুঃখজনক। এতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত।'
মামুন আহমেদ বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু পরিবেশে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা প্রশমিত করার জন্য সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করার জন্য আমি আহ্বান করছি।'
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ৬ দফা কী কী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। রোববার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি তুলে ধরে এসব কথা বলা হয়।
ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারের সামনে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইডেন কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার। তিনি ৬ দফা দাবি পড়ে শোনান।
৬ দফা দাবিগুলো হলো-১. ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যর্ (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্য হামলাসহ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা-পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় এসি-ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কর্তৃক ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসির সদস্য ও ঢাবির উপাচার্যের সমন্বয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সঙ্গে তাৎক্ষণিক উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট এলাকায় সিটি করপোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।##