কেউ নিজের স্বার্থ নিয়ে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে তাকে আমাদের পক্ষে টানা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণ যদি আপনার পেছনে না থাকে, তাহলে আপনি কিসের নেতা। মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এ আস্থা নষ্ট করার জন্য যদি কেউ কোনো কাজ করে, তাহলে তাকে তো আমি টানব না। এখানে দলকে স্বার্থপর হতেই হবে। কোনো ব্যক্তি, কর্মী, নেতার কারণে যদি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়, তাকে আমরা নিজের করতে পারব না।
বুধবার বিকালে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমরা বহু ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। বহু অত্যাচার নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আজকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। কেউ নিজের স্বার্থ নিয়ে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে তাকে আমাদের পক্ষে টানা সম্ভব নয়। কেউ কেউ বলে যারা অপরাধ করেছে ভুল করেছে তাদের সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি- এতে কী হবে। কী হবে সেটা পরের ব্যাপার; কিন্তু আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা যতটুকু জানছি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যখন যেটা জানব ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি।'
সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের চৌরাস্তা মোড়ে একটি অভিজাত হোটেলে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, 'কেউ যদি বলে- আপনি দল থেকে বের করে দিলেন, এতে কী হবে? সমাজে ভালোমন্দ সব ধরনের মানুষ আছে। আমরা খারাপ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাই না। অন্তত এ ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার থাকব। মুখে বলব একটা, কাজে করব আরেকটা, তা নয়। আমরা যা মুখে বলছি, তা আমরা কাজে প্রমাণ করার চেষ্টা করব। তার প্রতিফলন থাকবে। একটি রাজনৈতিক দল, সংগঠন হিসেবে যাতে সর্বোচ্চ করতে পারি, আমরা সেটাই করছি। আমরা যদি সরকারে থাকতাম, তাহলে আমরা যেটা করতে পারতাম, দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। এই মুহূর্তে আমরা সেই অবস্থানে নেই। কাজেই সেই অবস্থানে যদি আমাদের যাওয়ার সুযোগ হয়- আজকে যেমন শুধু দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছি, তেমনি সরকারে থাকলে অন্যায়কারী যেই হোক না কেন, আমরা মুখে যেটা বলি কাজেও সেটির প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব।'
৫ আগস্ট থেকে দলের নেতাকর্মীদের শিক্ষা নিয়ে জনগণের সঙ্গে থাকার আহবান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, 'রাজনৈতিক কর্মী, নেতারা যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়, জনগণের বিরুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করলে কী পরিণতি হয়, আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি। ৫ আগস্ট থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩১ দফার প্রশিক্ষণ আমরা করছি। ৩১ দফা জনগণের কাছে নিয়ে যাব। ৩১ দফা আমাদের অনুধাবন করতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে। জনগণ থেকে যদি দূরে সরে যাই আমরা- তাহলে ওই ৫ আগস্টের পরিণতি আমাদের হবে। ৫ আগস্টের পরিণতি থেকে দূরে থাকতে হলে জনগণের সঙ্গেই থাকতে হবে। আমরা সবাই কষ্ট করছি। আগামী দিনে যাতে দল সুফল পায়, আপনি আমি সুফল পাব- সেজন্য আমাদের কাজ করতে হবে।'
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউলস্নাহ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ।