নিষেধাজ্ঞার অবসান চালকের আসনে সৌদি নারী

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮, ২২:১৫

যাযাদি ডেস্ক
অনুমতি পাওয়ার পর রোববারই সৌদি আরবের নারীরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামেন Ñইন্টারনে
দশকের পর দশক ধরে সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালনোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেয়া হয়েছে। রোববার থেকেই দেশটির নারীরা বৈধভাবে গাড়ির চালকের আসনে বসার অনুমতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় পর অনেক নারী রোববার (শনিবার মধ্যরাতের পর) গভীর রাতেই স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে বসে ছবি তুলেছেন, বৈধভাবে গাড়ি চালিয়ে ভেঙেছেন কয়েক দশকের অগর্ল। প্রত্যেক সৌদি নারীর জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূতর্, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরপরই গাড়ির চালকের আসনে বসার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন টেলিভিশন উপস্থাপক সাবিকা আল-দোসারি। গাড়ি চালকদের জন্য এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না বলে মন্তব্য করেন ২১ বছর বয়সী শিক্ষাথীর্ হাতুন বিন দাখিল। আমাদের আর পুরুষদের প্রয়োজন পড়বে না, বলেন তিনি। ২৩ বছর বয়সী মাজদুলীন আল আতিক নিজের কালো লেক্সাস গাড়ি চালিয়ে প্রথমবারের মতো রাজধানী রিয়াদজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি বলেন, অলৌকিক মনে হচ্ছিল, আমি অত্যন্ত খুশি। গাড়ি চালাতে পেরে আমি খুব গবর্ অনুভব করছি। নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া নিয়ে গাড়ির কোম্পানিগুলো নাটকীয় বিভিন্ন বিজ্ঞাপন করেছে বলে জানিয়েছে বাতার্ সংস্থা রয়টাসর্। প্রাইভেট পাকির্ং গ্যারেজগুলোতে গোলাপি রংয়ের সাইনে ‘লেডিস’ লেখায় নারীদের পাকির্ং এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক সৌদি এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আনন্দ, উল্লাস প্রকাশ করেছেন। তবে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সমাজে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরেই সৌদি কতৃর্পক্ষ নারীদের গাড়ি চালনায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। নিবন্ধন পাওয়া নারীরা চলতি বছরের ২৪ জুন থেকে গাড়ি চালানোর অনুমতি পাবেন বলেও জানিয়েছিল তারা। ওই ধারাবাহিকতাতেই চলতি মাসের প্রথম দিক থেকে নারী চালকদের জন্য লাইসেন্স ইস্যুও শুরু হয়। চলতি মাসের ৫ তারিখে সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরের ১০ নারী তাদের বিদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স বদলে সৌদি লাইসেন্স নেন। এরাই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া প্রথম সৌদি নারী। এরপর নিয়মিতভাবে লাইসেন্স ইস্যু শুরু হয়। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার আগেই প্রায় দুই হাজার নারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাবেন বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিল সৌদি কতৃর্পক্ষ। রক্ষণশীলতার পরিবতের্ সৌদি সমাজের আধুনিকায়ন ও তেলনিভর্র অথর্নীতি থেকে সরে আসার লক্ষ্যে দেশটির বতর্মান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ এর অংশ হিসেবেই নারীদের গাড়ি চালনায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। অবশ্য অনেক সৌদি পুরুষই এ ঘোষণায় সন্তুষ্ট নন; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরবিতে ‘তোমরা গাড়ি চালাতে পারবে না’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রতিবাদও জানাচ্ছেন তারা। শনিবার পযর্ন্ত কট্টর ধমীর্য় শাসনে পরিচালিত সৌদি আরবই ছিল বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না। পরিবারগুলোকে নারী সদস্যের জন্য আলাদা চালক ভাড়া করতে হতো। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সৌদি কতৃর্পক্ষ গাড়ি চালানোর অধিকার চেয়ে আন্দোলন করা নারী মানবাধিকার কমীের্দর ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছে। অন্তত ৮ নারী অধিকারকমীর্ আটক রয়েছেন, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী আদালতে তাদের বিচারের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সক্রিয় আন্দোলনের জন্য অধিকারকমীের্দর দীঘর্ কারাদÐ হতে পার বলেও শঙ্কা মানবাধিকার বিষয়ক এ আন্তজাির্তক সংগঠনটির। আটককৃতদের মধ্যে নারীদের গাড়ি চালনার অধিকারের পক্ষে জোর প্রচারণা চালানো লুজাইন আল-হাথলৌলও আছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। সৌদি নারীদের পুরুষ অভিভাবকের ওপর নিভর্র করার বাধ্যতামূলক আইন বদলানোসহ বিস্তৃত সংস্কারে কতৃর্পক্ষের প্রতি আহŸান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। বেআইনিভাবে গাড়ি চালানোর কারণে ১৯৯০ সালেও রিয়াদে কয়েক ডজন নারী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে এবং ২০১১ থেকে ২০১৪-র মাঝামাঝি পযর্ন্ত অনেক নারীকেই স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে তাদের উপস্থিতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা গেছে।