সংসদে প্রধানমন্ত্রী অপরাধী যত বড় হোক, ছাড় দেয়া হবে না

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বধুবার সংসদে বক্তৃতা করেন
অপরাধী-দুর্নীতিবাজ যত বড়ই হোক, এমনকি তার দলের হলেও কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্‌বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এ কথা জানান। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব) রফিকুল ইসলাম এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নানের আলাদা দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে দেন প্রধানমন্ত্রী। রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নে 'দুর্নীতি দমন কমিশনের অনেকেই দুর্নীতি ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে জনশ্রম্নতি আছে'- এই লাইনটি বাতিল করতে রফিকুল ইসলামের প্রস্তাবের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নে তিনি জনশ্রম্নতি আছে এ কথাটা বলেছেন। এ কথাটা বাতিল করার প্রয়োজন নেই। কারণ কথাটা একেবারেই তো মিথ্যা নয়। আর সবাইতো একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা নন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না যে, সবাই একেবারে একশ' ভাগ সৎ। সেক্ষেত্রে উনি বলেছেন এই সংস্থার মধ্যে অনেকেই দুর্নীতিবাজ বলে জনশ্রম্নতি আছে। তিনি মনে করেন, সংস্থাকে এখন থেকে সচেতন হতে হবে, বা যারা কাজ করবে তাদের ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে, যেন এমন কিছু না করেন যাতে এই ধরনের জনশ্রম্নতি সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি দমনই বলেন আর খাদ্য নিরাপত্তাই, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এখানে এমন এমন অনেক বড় বড় জায়গা আছে, যেখানে হাত দিলেই মনে হচ্ছে হাতটা পুড়ে যাচ্ছে এবং যারা এই কাজটা করতে যায় তারাই অপরাধী হয়ে যায়। আর কিছু কিছু পত্রপত্রিকাতো আছেই যে এদের বিরুদ্ধে লেখা শুরু করে। তিনি বলেন, সেখানেও তাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা যে, সঠিক কাজটা করেছে কি-না, সেটা দেখে বিচার করা। কোন পত্রিকায় কী লিখল সেটা দেখা নয়। সরকারপ্রধান বলেন, রোজার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন, তখন বেশকিছু বড় বড় জায়গায় একজন অফিসার হাত দিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো, যেটা তার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। তিনি বলে দিয়েছেন তাদের আগের জায়গায় বহাল রাখতে। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় বড় জায়গায় খারাপ কিছু থাকবে না, অনিয়ম হবে না, যারা মালিক তারাও তো গ্যারান্টি দিতে পারবে না। সেখানে পরীক্ষা করতে পারবে না, কেন সচেতন করতে পারবে না। সাধারণ ছোটখাটো সেগুলো ধরতে পারবে, বড় অর্থশালী সম্পদশালী হলে তাদের হাত দেয়া যাবে না, তাদের অপরাধ অপরাধ না। এটাতো হয় না। অপরাধী সে অপরাধী, তার চোখে অপরাধী সে অপরাধী, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চেষ্টা করেন, কীভাবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা যায়। তিনি নিজেকে দেশের মানুষের সেবক হিসেবে মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী একটা দায়িত্ব, এই দায়িত্ব যথাযথ পালনের চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যায়, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়, তখন বিভিন্ন স্তরে কিছু টাউট-বাটপার শ্রেণির মানুষ তৈরি হয়। এদের শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে দমন করা সম্ভব হয় না। এদের সামাজিকভাবে দমন করতে হবে। জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরে যারা প্রতিনিধি আছেন, তাদের তিনি বলবেন সবাই মিলে এলাকায় এলাকায় কমিটি করতে, যেন কেউ অপরাধের সুযোগ না পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সবসময় বলেন, অপরাধী যেই হোক, তার দলেরও যদি হয়, ছাড় দিচ্ছেন না, পাবেও না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার শাসন ঘর থেকেই শুরু করতে হয়, তিনিও তাই করছেন। অন্যরা করলেও ছাড় পাবে না, তার দলের কেউ অপরাধ করলে তারাও ছাড় পাবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলেও তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন এবং এটি অব্যাহত থাকবে। ঘুষ গ্রহণকারীর মতো প্রদানকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঘুষ যে নেবে সেও অপরাধী, যে দেবে সেও অপরাধী। সবার বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কেউ ছাড় পাবে না। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্‌বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি, অপরাধ দমনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের যারা আছেন সবাই একসঙ্গে কাজ করেন। তবেই এই অপরাধ-দুর্নীতি বন্ধ করতে পারব।