খোশ আমদেদ মাহে রমজান
প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
আবছার তৈয়বী (আবুধাবি থেকে)
আলস্নাহর জন্য সব প্রশংসা- যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা ও পালনকর্তা। যিনি রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতসমৃদ্ধ 'মাহে রমজান' আমাদের দান করেছেন। অফুরন্ত দরুদ ও সালাম জানাই প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুলস্নাহ সালস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নামের প্রতি- যিনি মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত মুমিন-মুসলমানদেরকে নানা রকম ইবাদাত-বন্দেগী করে 'ইনসানে কামিলী' তথা প্রকৃত পরিপূর্ণ মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হওয়ার পথ বাতলে দিয়েছেন। তাই আসুন, আমরা সবাই হৃদয়ের মণিকোঠা নিঃসৃত আবেগ আর ভালোবাসা দিয়ে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহাসওগাত নিয়ে আসা খোদায়ী নেয়ামত 'মাহে রমজান'কে খোশ আমদেদ ও স্বাগতম জানাই। খোশ আমদেদ- হে সিয়াম সাধনার মাস, স্বাগতম- হে কোরআন নাযিলের মাস, আহ্লান ওয়া সাহ্লান- হে লায়লাতুল কদরের মাস। তারাবীহ্, সাহরি, ইফতার ও অগণিক পুণ্য কাজের মাস তোমায় প্রাণপণে স্বাগতম। হে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মাস- আমরা গুনাহ্গারদের
জীবনে তোমার আগমন শুভ হোক, মঙ্গলময় হোক, হোক অফুরন্ত বরকতময়।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আসা পবিত্র মাস রমজানুল মোবারকের আজ প্রথম দিন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমানরা আলস্নাহ তায়ালা ও প্রিয় রাসূল সালস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নামের আদেশে আজ থেকে রোযা রাখা শুরু করেছেন। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুলস্নাহ্ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুলস্নাহ্ সালস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম বলেছেন, ইসলামের ভিত বা খুঁটি হলো পাঁচটি। যথা- ১. আলস্নাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, হযরত মুহাম্মদ সালস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম আলস্নাহর রাসূল- এই মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া বা ঘোষণা করা। ২. সালাত কায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্ব করা ও ৫. রমজান মাসে রোজা রাখা (বুখারি ও মুসলিম)।
মাহে রমজানের রোজা ফরজ করে মহান আলস্নাহ ঘোষণা করেন, 'ইয়া আইয়ু্যহালস্নাযীনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস্ সিয়ামা কামা কুতিবা আলালস্নাযীনা মিন ক্বাবলিকুম লা'আলস্নাকুম তাত্তাক্বুন' অর্থাৎ 'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরজ বা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা খোদাভীরু হতে পার।' এই আয়াতে মাত্র একটি শব্দে (তাত্তাক্বুন তথা খোদাভীরু হওয়া) আলস্নাহ্ পাক রোযা ফরজ করার কারণ বর্ণনা করেছেন। মূলত 'রোযা' কোনো উপবাস ব্রত নয়, বরং রোযা হলো- নানা পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত মানুষকে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন 'সোনার মানুষে' পরিণত করার এক খোদায়ী প্রশিক্ষণের নাম। যে ব্যক্তি যত সফল ও নিখুঁতভাবে এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে পারে, সে ততই খাঁটি মানুষে পরিণত হতে পারে। মাটির মানুষ যে সোনার মানুষে পরিণত হতে পারে, জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত মানুষ যে পরহেজগার হতে পারে, পরের অনিষ্ট সাধনে সদা তৎপর ব্যক্তি যে পরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে- তা মাহে রমজানে দিবালোকের মতো প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
বস্তুত আলস্নাহ প্রদত্ত ও প্রিয় রাসূল সালস্নস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম প্রদর্শিত জীবনধারাই যে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তির নিশ্চিত গ্যারান্টি, তা মাহে রমজানে রোযাদার মুসলমানরা ভালোভাবেই হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। আলস্নাহ আমাদেরকে মাহে রমজানের পুরোপুরি হক আদায় করে সিয়াম সাধনা করার তাওফিক দিন। আমিন, বিহুরমাতি রাহমাতুলিস্নল আলামীন সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম।
আবছার তৈয়বী : লেখক, গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদ