রোজাদারের গলা কাটার মহোৎসব বন্ধ হোক

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

আবছার তৈয়বী (আবুধাবি থেকে)
মাহে রমজান মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে অন্য মাসের তুলনায় রোজাদারগণ বেশ ভাল ও উন্নতমানের উপাদেয় খাবার খেয়ে থাকেন। যদিওবা আর্থিক সঙ্গতি বিশেষে এ খাবার যোগাড় করার ক্ষেত্রে তারতম্য দেখা যায়। তারপরও সবাই বেশ ভালোই খেতে পারেন অন্য ১১টি মাসের তুলনায়। এটা যেন প্রিয়নবী হযরত রাসূলে করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসালস্নামের পবিত্র হাদিসেরই বান্তব উদাহরণ। হাদিসে পাকে ইরশাদ হচ্ছে- 'রমজান মাসে মুসলমানদের 'রিয্‌ক' তথা জীবনোপকরণ বাড়িয়ে দেয়া হয়।' কিন্তু ফিবছর এতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত লোভ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়- আমাদের দেশে যারা ভোগ্যপণ্য আমদানি করেন, সে সব ব্যবসায়ীর সংখ্যা পঞ্চাশের নিচে। তারপরও তাদের হাতে জিম্মি দেশের আঠারো কোটি মানুষ। এসব ব্যবসায়ীদের কেউ হাজি, কেউ গাজি আবার কেউ সুফি তকমা নিয়ে ছড়ি ঘোরায় পুরো সমাজে। মাহে রমজানে আলস্নাহ্‌ তায়ালার নিয়ামত এবং রহমতকে অবজ্ঞা করে আলস্নাহ তায়ালা ও রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসালস্নামের আদেশ অমান্য করে তারা অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য-সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং অধিক মূল্যে বিক্রি করে থাকে। যা শুধু অমানবিকতাই নয়, ধর্মীয় দৃষ্টিতেও বড়ো ধরণের অপরাধ। আবার আমাদের দেশে উৎপাদিত শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ খাদ্যপণ্য সামগ্রীর মূল্যও রমজান মাসে বেড়ে যায় সমান তালে। দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের আহ্বান ও র্নিদেশনা ফলপ্রসূ হয় না। ফলে যেই লাউ সেই কদু অবস্থা। তাহলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কি কোন উপায় নেই? ব্যবসায়ীরা কি প্রতিবছর রোজাদারের গলা কাটার প্রতিযোগিতা চালিয়েই যাবে? প্রিয় পাঠক! না, এভাবে চলতে দেয়া যায় না। একটি কল্যাণমূলক, ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এসব চালবাজি, ফেরেববাজি, মজুদদারি এবং গলাকাটা মুনাফাখোরি বন্ধ করতে হবে। এজন্য আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি যাতে ভোক্তা সাধারণের কাছে পৌঁছুতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য পহেলা পদক্ষেপটা নিতে হবে সরকারকেই। প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালযসহ সংলিষ্ট করত্মৃপক্ষকে আশু ব্যবস্থা নিতে হবে। অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। সোচ্চার হতে হবে ভোক্তা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণকে। এতে করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক যেমন লাভবান হবে, তেমনি দেশের আপামর জনসাধারণ তুলনামূলক সস্তা দামে ফরমালিন ও ভেজালমুক্ত টাটকা শাক-সবজি ও ফলমুল খেতে পারবে। জনগণ ন্যায্য মূল্যে ভোগ্যপণ্য খরিদ করতে সক্ষম হবে। এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি গুদামজাত করে সংকট সৃষ্টি করা হারাম ও বড় গুনাহ। মাহে রমজানে সেই গুনাহ্র পালস্নাটা আরো বেশি ভারি করে এসব ব্যবসায়ী নামের অসাধু ব্যক্তিরা। এ সম্পর্কে আমাদের প্রিয়নবী হযরত রাসূলে করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসালস্নাম ইরশাদ করেছেন, 'কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ফাজির-ফাসিক এবং নাফরমান হিসেবে হাশর হবে। কিন্তু যারা (নিজেদের ব্যবসায় অতি মুনাফাখোরি ও ভেজাল মিশ্রণের ক্ষেত্রে) আলস্নাহকে ভয় করেছে, অবৈধ পন্থা অবলম্বন থেকে দূরে থেকেছে এবং সততার পরিচয় দিয়েছে তারা ব্যতিত।' (কিমিয়ায়ে সা'আদাত- ইমাম গায্যালী রহ.) আবার হাদিসে পাকের ভাষ্য অনুযায়ী যারা সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী- তাদের হাশর ও জান্নাতে অবস্থান হবে নবীদের সাথে, সিদ্দীক, শহীদ ও আলস্নাহ্র ওলীদের সাথে। সুবহানালস্নাহ্‌! অন্য আরেকটি হাদিসে প্রিয়নবী হযরত রাসূলে করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম ইরশাদ করেন, 'কোন বান্দা যদি হারাম বা অবৈধ পন্থায় ধন-সম্পদ উপার্জন করে, সেই ধন-সম্পদ থেকে দান করলে তা আলস্নাহ্র দরবারে গৃহীত হবে না। সেই সম্পদ থেকে ব্যয় করলে, তাতে বরকত বা সাওয়াব দেয়া হবে না। আর সে যদি তা পরবর্তী বংশধরদের জন্যে রেখে যায়, তাহলে সে যেন জাহান্নামের অবলম্বনই রেখে গেলো"। আরেকটি হাদিসে প্রিয়নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসালস্নামের ইরশাদ করেন, 'হারাম খাওয়ার মাধ্যমে বর্ধিত শরীর জান্নাতে যাবেনা' (বায়হাকি)। উপরোক্ত হাদিসসমূহ থেকে বুঝা যাচ্ছে, হারাম বা অবৈধ ধন-সম্পদ খেয়ে ইবাদত করলে এবং এ থেকে দান করলে তা কবুল তো হবেই না; বরং এজন্যে তাকে দোযখের আগুনে জ্বলতে হবে। তাই এ বিষয়ে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন। আলস্নাহ্‌ আমাদের বোধোদয় দান করুন। আমিন। বিহুরমাতি রাহমাতুলিস্নল আলামীন সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম। আবছার তৈয়বী: লেখক, গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ।