ক্রিকেট ব্যাটের গ্রামেও বিশ্বকাপের ঢেউ

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

যশোর প্রতিনিধি
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ঢেউ 'ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম' খ্যাত যশোরের নরেন্দ্রপুরের মিস্ত্রি পাড়ায়ও লেগেছে। এ গ্রামের কারিগররা এখন আন্তর্জাতিকমানের ব্যাট বানাতে চান। তাদের দাবি, দেশে যারা ক্রিকেটার হিসেবে খেলেন তাদের জন্যও সাশ্রয়ী মূল্যে তারা ব্যাট তৈরি করতে চান। যশোর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রাম। এই গ্রামের কারিগরপাড়া এখন 'ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় ২৫ বছর ধরে এই গ্রামের কারিগররা ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করছেন। তাদের তৈরি ব্যাট দিয়ে সারাদেশের খুদে ক্রিকেটাররা টেনিস বলে মাঠ মাতাচ্ছে। এখন এই কারিগররা বিশ্বমানের ক্রিকেট ব্যাট তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও ব্যাট তৈরির প্রধান উপকরণ 'উইলো কাঠ' আমদানি করতে পারলে সৌম্য, সাকিব, তামিমদের খেলার ব্যাট তৈরি সম্ভব বলে জানিয়েছেন মিস্ত্রীপাড়ার কারিগররা। এ গ্রামে ২৫ বছর ধরে ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করছেন সুবল মজুমদার। ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদের তৈরি ব্যাট সারাদেশে সাড়া ফেলেছে। তবে আক্ষেপ একটাই মুশফিক, সাকিব, তামিমদের খেলার ব্যাট তারা তৈরি করতে পারেননি। উন্নতমানের কাঠের অভাবে এটি তৈরি করা যাচ্ছে না। সুবল মজুমদার বলেন, 'বিশ্বমানের ক্রিকেট ব্যাট তৈরিতে যে কাঠ দরকার, সেটি আমাদের দেশে নেই। বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারলে আমরা 'আন্তর্জাতিক মানের ব্যাট' তৈরি করে দিতে পারব।' এ গ্রামের কারিগররা জানান, শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-যুবদের টেনিস বল খেলার জন্য সাত ধরনের ব্যাট তৈরি করেন তারা। প্রতি বছর এই গ্রাম থেকে প্রায় ৪ লাখ পিস ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয়। এখান থেকেই সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। তবে এর সবচেয়ে বড় বাজার উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে। এখান থেকে প্রতিটি ব্যাট ২০ টাকা থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়। সারাবছর ব্যাট তৈরি হলেও মূলত চারমাস এর জমজমাট ব্যবসা হয়। অগ্রহায়ণে পাকা ধান উঠে যাওয়ার পর শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে শুরু হয় গ্রামগঞ্জের মাঠেঘাটে ক্রিকেট খেলা। যে কারণে পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র- এই চারমাস থাকে ক্রিকেট ব্যাটের চাহিদা। এই ভরা মৌসুমে ৩০-৩৫টি কারখানায় চলে পুরোদমে ব্যাট তৈরির কাজ। বছরের অন্যান্য সময় ১২-১৫টি কারখানায় ব্যাট তৈরি ও মজুদ করা হয়। কারিগররা জানান, ভালো মানের ব্যাট তৈরি করতে ৭০-৭৫ টাকার কাঠ, ৫০ টাকা মজুরি, ১০ টাকা হাতল, গ্রিপ, স্টিকার, পলিথিন মিলে আরও ২০ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচও আছে। ব্যাট তৈরিতে কদম, জীবন, নিম, গুল্টে (পিটুলি), পুয়ো, ছাতিয়ান, ডেওয়া কাঠ ব্যবহার করা হয়। ভালো মানের ব্যাট তৈরিতে নিম ও জীবন কাঠ বেশি ব্যবহৃত হয়।