ইসলাম মধ্যপন্থার ধর্ম এবং উত্তম জীবনব্যবস্থা

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

আবছার তৈয়বী (আবুধাবি থেকে)
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দীন বা জীবন বিধান হিসেবে তার প্রতিটি বিধিবিধানের ক্ষেত্রে মানুষের মানবিক চাহিদা, শারীরিক যোগ্যতা ও আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলাম মানুষের ওপর এমন কোনো বিধিবিধান চাপিয়ে দেয়নি- যা মানুষ পালন করতে অক্ষম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- 'লা ইউকালিস্নফুলস্নাহু নাফসান ইলস্না উস্‌'আহা' অর্থাৎ আলস্নাহ্‌ কোনো মানুষকে এমন কিছু চাপিয়ে দেন না বা এমন কোনো কষ্ট দেন না- যা তার সাধ্যতীত বা সে করতে অক্ষম। ইসলামের অন্যতম অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় বিধান 'রোজা'র ক্ষেত্রেও ইসলামের এ উদারতা এবং মহানুভবতার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই ইসলাম কতিপয় ব্যক্তিদের রমজান মাসে রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অবশ্যই তার কাজা আদায় করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে রোজা না রাখার অনুমতি আছে, তা হলো- ১. গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে ২. পিপাসায় মরণাপন্ন কিংবা কঠিন রোগগ্রস্ত হলে ৩. শিশুর পানীয় মায়ের স্তনে দুধ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে ৪. রোগ-বা অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে ৫. হঠাৎ পেটে বেদনা হয়ে অস্থিরতা দেখা দিলে ৫. সাপে কাটলে ৬. মেয়েলোকের হায়েজ (মাসিক স্রাব), নেফাস (প্রসবোত্তর স্রাব) হলে ৭. বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা অতিশয় দুর্বল ও শক্তিহীন হলে। ৮. কোনো হিংস্র জন্তু দংশন করলে এবং এতে মৃতু্যর আশঙ্কা থাকলে ৯. মুসাফিরের ক্ষেত্রে রোজা রাখা ও না রাখা তার ইচ্ছাধীন। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- শরহে মাআনিউল আছার, দুররুল মোখতার, রাদ্দুল মোহতার, ফাতওয়া-ই-আলমগীরী, ফাতওয়া-ই-রেজভিয়্যাহ, হেদায়া এবং বাহারে শরিয়ত ইত্যাদি ফিকাহ গ্রন্থাবলি) প্রত্যেক ইমানদার মুসলমানকে মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত আলস্নাহ তা'আলা ও তার প্রিয় হাবিবে করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নামের সন্তুষ্টি লাভের জন্য তৎপর থাকা উচিত। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা.) থেকে বর্ণিত, নূরনবী হযরত রাসুলে করিম সালস্নালস্নাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম ইরশাদ করেছেন, 'রয ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাসে আলস্নাহ্‌ তা'আলার স্মরণে তন্ময় থাকে, তার পাপরাশি মোচন হয়ে যায়। প্রার্থনাকারী কখনো বিফল মনোরথ হয় না।' তবে, সবাইকে এ কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, দো'আ কবুল হওয়ার জন্য হালাল উপার্জন ভক্ষণ করা এবং এ জন্য হালাল রিয্‌ক তালাশ করা প্রধানতম শর্ত। নূরনবী হযরত রাসুলে করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম ইরশাদ করেন, 'নিশ্চয়ই আলস্নাহ পবিত্র (সর্বপ্রকার দোষ ও ত্রম্নটিমুক্ত), তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া ভিন্ন কিছুই কবুল করেন না। আর আলস্নাহ তার রাসুলগণকে যেই আদেশ দিয়েছেন, মুমিনদেরও সেই একই আদেশ দিয়েছেন। অতঃপর রাসুলে করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম আলস্নাহর বাণী পাঠ করলেন- (যার অর্থ) 'হে রাসুলগণ! আপনারা পবিত্র খাবার আহার করুন এবং নেক কাজ করতে থাকুন। আলস্নাহ তাআলা আরও বলেন, হে মুমিনগণ! আমার দেয়া পবিত্র রিযিক হতে তোমরা আহার কর। অতঃপর রাসুলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম উলেস্নখ করলেন- এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দূরদূরান্ত পথ সফর করেছে, ফলে যার মাথার চুল এলোমেলো এবং শরীর ধুলো-বালিতে মলিন (উলেস্নখ্য, এরূপ মুসাফিরের দোয়া সহজেই কবুল হয়ে থাকে), এমতাবস্থায় সে আকাশের পানে দুই হাত তুলে 'ইয়া রব... ইয়া রব' (ওহে প্রভু, ওহে প্রভু) শব্দে প্রার্থনা করে থাকে। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে নিত্য হারামই খেয়ে থাকে। তাহলে সে কেমন করে তার প্রার্থনার জবাব পাবে?' অর্থাৎ মুসাফির হওয়া সত্ত্বেও অবৈধ উপার্জন ও তা ভক্ষণের ফলে তার দোয়া আলস্নাহর দরবারে কবুল হবে না। (মুসলিম)। জলিলুল কদর সাহাবি হযরত আবদুলস্নাহ ইবনে মসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী হযরত রাসুলে করিম সালস্নালস্নাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম ইরশাদ করেছেন, 'হালাল ও বৈধ পন্থায় জীবিকা উপার্জন করা ফরজ নামাজের পর ফরজ' (বায়হাকি)। উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হালাল বা বৈধ পন্থায় আয়-রোজগার এবং হালাল বা বৈধ উপায়ে আহরিত রিযিক বা সম্পদ হতে পানাহার না করলে মাহে রমজানের রোজা এমনকি কোনো ইবাদতই আলস্নাহর দরবারে কবুল হবে না। আমাদের সমাজে দেখা যায় যে, মাহে রমজানে রোজা রেখে রোজাদাররা এক ফোঁটা পানি এমনকি মুখের সামান্য লালা বা থুথু গিলে ফেলতেও ভয় পায় এবং এ জন্য সদা সর্তক থাকে, যাতে করে রোজা নষ্ট না হয়। রোজাদারের এই যে সচেতনতা- এটা খুবই প্রশংসনীয়ও বটে। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক রোজাদারের এমনই সচেতন থাকা প্রয়োজন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- সেই একই রোজাদার দিব্যি অন্যের হক গিলে ফেলতে কোনো প্রকার দ্বিধা করে না! দ্দধু রোজার মাসে নয়, বরং এটি প্রত্যেক মাসে, প্রত্যেক দিনে এবং প্রতি ক্ষণে তথা সারা জীবনে স্মরণ রাখা উচিত। তবে আমাদের সব ইবাদাত এবং সব দোয়া মহাপবিত্র আলস্নাহর দরবারে কবুল হবে। আলস্নাহ পাক আমাদের হালাল উপার্জনের মাধ্যমে অর্জিত রিযক থেকে পানাহার করে রোজাসহ যাবতীয় ইবাদাত-বন্দেগি করার তাওফিক দিন। আমিন! বিহুরমাতি রাহমাতুলিস্নল আলামীন সালস্নালস্নাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসালস্নাম। আবছার তৈয়বী :লেখক, গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ