মাগুরায় শিশু ধর্ষণ

আদালত ঘেরাও করে ধর্ষকের বিচার দাবি সর্বস্তরের মানুষের

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে আসা আট বছর বয়সি শিশু ধর্ষণের মামলায় চার আসামির রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার দুপুরে মাগুরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে এই রিমান্ড আবেদন করা হয়। আসামিরা সবাই কারাগারে আছেন। এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মাগুরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকের বিচারের দাবিতে আদালত ঘেরাও ও সড়ক অবরোধ করে রোববার দিনভর বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র, জনতাসহ জেলার সর্বস্তরের মানুষ। অন্যদিকে, ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে মাগুরায় পাঁচ জন আইনজীবীর একটি সেল গঠন করা হয়েছে। মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন বলেন, 'মামলায় চার আসামি কারাগারে আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আসামিরা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), অপ্রাপ্তবয়ষ্ক এক কিশোর (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)।' গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) এনে ভর্তি করা হয় এবং পরে শুক্রবার রাতে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। শনিবার ঢাকা মেডিকেলে শিশুটির অবস্থা 'সঙ্কটাপন্ন' জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এরপর তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলেও সন্ধ্যায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে আনা হয়। রোববার সকালে শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে সিএমএইচে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেখানে তিনি শিশুটির সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ক্ষোভে উত্তাল মাগুরা শিশু ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে জেলা। চলছে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। রোববার সকালে সরকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, আদর্শ ডিগ্রী কলেজ, মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, নিজনান্দুয়ালী, পারনান্দুয়ালী, ভায়নাসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসব মিছিল ঝিনাইদহ যশোর নড়াইল সড়কের প্রবেশদ্বার ও মাগুরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে। ধর্ষকের বিচারের দাবিতে মিছিলকারীরা মাগুরা চীফ জুডিশিয়াল আদালতের সামনেও বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধর্ষকের বিচার দাবী করেন। পরে সেনাবাহিনীর কয়েকটি টিম তাদের নিবৃত্ত করে। দুপুর ৩ টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহ যশোর নড়াইল সড়কে অবরুদ্ধ করে শহরের ভায়না মোড়ে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। এতে বন্ধ হয়ে যায় মাগুরা-ঢাকা, যশোর, ঝিনাইদহসহ সব রুটে যান চলাচল। সড়কের দু'পাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়ির লাইন পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারীরা। সন্ধা ৭টায় আবারও সড়ক অবরোধের ডাক দিয়ে ইফতারির আগে অবরোধ তুলে নেন তারা। এ সময় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আইনি সহায়তা দেবে বিএনপি এদিকে, মাগুরায় 'ধর্ষণের শিকার' শিশু এবং তার পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এজন্য মাগুরায় পাঁচ জন আইনজীবীর একটি সেল গঠন করা হয়েছে বলে আইন সম্পাদক কায়সার কামাল জানিয়েছেন। আইনজীবীরা হলেন- শাহেদ হাসান টগর, মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামান খান, কুমুদ রঞ্জন বিশ্বাস, এম এ রশিদ ও মিজানুর রহমান মিজান। রোববার সুপ্রিম কোর্টে কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, 'বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ধর্ষণের শিকার শিশুটির চিকিৎসার সব ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। আইনি সহায়তার জন্য সেল গঠন করে দিয়েছেন।' এ সময় আইনজীবী মাকসুদ উলস্নাহ ও রোকনুজ্জামান সুজা উপস্থিত ছিলেন।