'নৈরাজ্য ও মবের' বিরুদ্ধে সরকারের 'কঠোর' বার্তা
প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা, 'মব জাস্টিস', ডাকাতির মত ঘটনা সরকার এখন থেকে কঠোর হাতে দমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তুলে ধরেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হলে অপরাধী যে-ই হোন না কেনো তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে আইনি যত ব্যবস্থা আছে, সব নেওয়া হবে।
রোববার সচিবালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন মাহফুজ আলম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্র ?উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, 'আজকে আলোচনা হয়েছে, লালমাটিয়া ইসু্যতে বা যেখানেই হোক না কেন, আপনারা জানেন আইন হচ্ছে অন্ধ; যে অপরাধী হোন না কেনো এটার কোনো জাত-বাদ-ধর্ম দেখা হবে না। লিঙ্গও দেখা হবে না। নারী কি পুরুষ; যিনি অপরাধ করুন না কেনো, যিনিই মব জাস্টিস করবেন না কেনো, তিনি ধার্মিক হোন, বিধার্মিক হোন, যেই হোন না কেনো তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, 'আজকে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, সামনে থেকে মব জাস্টিস পরিস্থিতি তৈরি হলে বা কোনো ধরনের থানা ঘেরাও থেকে শুরু করে যে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হলে এবার থেকে আমরা খুব কঠোর ভূমিকায় থাকব। ওখানেই গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আমরা স্টেকহোল্ডারদেরকে বলে দিয়েছি।'
সরকার সব ধরনের মবের বিষয়ে 'জিরো টলারেন্স' অবস্থান নিয়েছে তুলে ধরে মাহফুজ আলম বলেন, 'আগে যে মবগুলো হয়েছে, মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটেছে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলা হলে বা আমাদের জায়গা থেকে মামলার ব্যবস্থা নিতে পারি। এর ভিত্তিতে আমরা অবশ্যই সামনে থেকে মব জাস্টিস পরিস্থিতি থেকে শুরু করে যে কোনো জায়গায় এখানে ওখানে গিয়ে ডাকাতি, যতগুলো ঝামেলা আছে, যতগুলো জটিলতা সোসাইটিতে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা, নৈরাজ্য আমরা এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স ভূমিকায় অবতীর্ণ হবো।'
জনগণকে আশ্বস্ত করে উপদেষ্টা বলেন, 'এটা আজকে আমাদের মিটিং থেকে, আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করতে চাই। জনগণকে জানাতে চাই যে, যেখানে মব জাস্টিস পরিস্থিতি তৈরি হবে সে যে-ই হোন না কেন, যে ধর্মের, যে বর্ণের, যে লিঙ্গের, যে জাতেরই হোন না কেনো আমরা ওখান থেকে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবো।'
'বাংলাদেশে ধর্ষকদের স্থান হবে না'
এদিকে, 'বাংলাদেশের ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না। মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে'-বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রোববার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা জানান তিনি।
নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না। মাগুরার ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের সবাইকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করবে সরকার। একইভাবে যদি দেশের কোথাও নারীর প্রতি কোনো সহিংসতা বা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে, তাদের সম্পূর্ণভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান 'জিরো টলারেন্স'।
তিনি বলেন, 'ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ যাবৎ নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রম্নত তদন্ত সম্পন্নপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করবে। এতে যারা তাদের বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।'
উপদেষ্টা বলেন, 'গত শুক্রবার জুমা শেষে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা বায়তুল মোকাররম এলাকায় একটি মিছিল করে। পরে পুলিশের বাধার মুখে সেটি পন্ড হয়ে যায় ও তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সরকার এ বিষয়ে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করেছে। কোনোভাবেই কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।'
সংঘবদ্ধ মব দুষ্কৃতিকারীদের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় এক এসআইকে কিছু স্থানীয় মাদকসেবী, দুষ্কৃতিকারী ও ছিনতাইকারীরা মব সৃষ্টি করে মারধর করেছে, যাদের পরবর্তীতে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর যে কোনো আক্রমণ বরদাস্ত করা হবে না, কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে।
রমজানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রায় শতাধিক তলস্নাশি চৌকি বা চেকপোস্ট বসানো হয়েছে ও অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথবাহিনী টার্গেট এলাকাসমূহে জোরদার অপারেশন পরিচালনা করছে। এসব চেকপোস্ট এবং টহল দলের রাত্রিকালীন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়মিত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
'রমজানে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই প্রতিরোধ এবং বিভিন্ন বিপণী বিতানে যাতায়াতকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। রমজান ও আসন্ন ঈদে সাধারণ জনগণের বাড়ি যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে মহাসড়কসমূহে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে' বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, 'যে সব অপরাধের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যাবে, সেগুলো সংগ্রহ করে ফ্যাক্ট চেকিং করে অপরাধীদের শনাক্তকরণ করা হবে এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এখন কোনো নারী নিরাপত্তাহীন বোধ করলে পুলিশের কাছে গিয়ে সে কি নিরাপত্তা পাবে- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'পুলিশের কাছে গেলে যদি কেউ প্রতিকার না পায়। সেটা আমার নজরে আনবেন, আমি ওই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।'