বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা

এক পশুর হাট নিয়ে দুই সিটি সংস্থার টানাটানি

ডিএসসিসি ১৪টি এবং ডিএনসিসি ১২টি স্থানে দরপত্র আহ্বান করেছে। এছাড়া আফতাবনগরে অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে দরপত্র আহ্বান করেছে উভয় সিটি করপোরেশন

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০১৯, ০০:০০

ফয়সাল খান
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর ২৬টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ১৪টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১২টি স্থানে দরপত্র আহ্বান করেছে। এছাড়া আফতাবনগরে অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে দরপত্র আহ্বান করেছে উভয় সিটি করপোরেশন। এতে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গত ১৭ মে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১২টি অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট ইজারার দরপত্র আহ্বান করে। এরমধ্যে নতুন দুটি এবং ১০টি পুরনো। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৪টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এরমধ্যে আফতাবনগরে অস্থায়ী পশুর হাটও রয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, হাটের এলাকা তাদের সীমানায় পড়েছে। মূলত জায়গাটি দুই সিটি করপোরেশনের সীমান্ত এলাকায় পড়েছে। সামনের জায়গা ডিএনসিসির এবং পেছনের জায়গা ডিএসসিসির। বিভক্তির পর থেকে ওই স্থানে ডিএনসিসি হাট ইজারা দিলেও গত ঈদে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে হাট ইজারা দেয়নি সংস্থাটি। কিন্তু ঈদের কয়েকদিন আগে তড়িঘড়ি করে ডিএসসিসি ওই স্থানে হাট বসানোর অনুমতি দেয়। এবার দুই সিটি করপোরেশনই একই স্থানে দরপত্র আহ্বান করায় তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'সীমানা নির্ধারণী গেজেট অনুযায়ী যেখানে আফতাবনগর হাট বসানো হয়, তার বেশির ভাগ অংশ ডিএসসিসির আওতাভুক্ত। এজন্য আমরা এবার ডিএনসিসিকে ওই স্থানে হাট ইজারা না দেয়ার অনুরোধ করেছি। ডিএনসিসি যদি আমাদের অনুরোধ না শোনে তাহলে ওই এলাকার দুটি হাট ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে।' ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, 'আফতাবনগর হাট বহু বছর ধরে ডিএনসিসি ইজারা দিচ্ছে। গত বছর বিশেষ কারণে ডিএনসিসি বরাদ্দ দেয়নি, তবে এবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আফতাবনগরে ডিএসসিসির হাট ইজারা দেয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। তারা আমাদের কাছে একটি পত্র লিখেছে, আমরা শিগগিরই তার জবাব দেব।' উত্তরে ১২ হাট : ১. উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা ২. মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বসিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা ৩. মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড-০৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা ৪. খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা ৫. খিলক্ষেত ৩০০ ফুট সড়ক সংলগ্ন উভয় পাশের বসুন্ধরা হাউজিংয়ের খালি জায়গা ৬. ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাট ৭. মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তর পাশের সেতু প্রোপার্র্টি ও সংলগ্ন খালি জায়গার অস্থায়ী পশুর হাট ৮. ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ ৯. উত্তরখান মৈনারটেক শহিদনগর হাউজিংয়ের খালি জায়গা ১০. বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) বস্নক-ই, সেকশন-৩ এর খালি জায়গা ১১. কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা এবং ১২. উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের উত্তরার স্স্নুইসগেট হতে কামারপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত ফাঁকা জায়গা। দক্ষিণে ১৪ হাট : ১. উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ২. ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ৩. লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ৪. কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় হতে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ৫. শ্যামপুর বালুর মাঠসহ আশপাশের খালি জায়গা ৬. শ্যামপুর বালুর মাঠসহ আশপাশের এলাকার খালি জায়গা ৭. মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের এলাকার খালি জায়গা ৮. ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন আশপাশের এলাকার খালি জায়গা ৯. লিটিল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা ১০. শনির আখড়া ও দনিয়া মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ১১. ধুপখোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ১২. ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারটেক মাঠসংলগ্ন আশপাশের এলাকার খালি জায়গা ১৩. আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা এবং ১৪. দাওকান্দি ইন্দুলিয়া ভাগাপুরনগর (আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং মেরাদিয়া মৌজার সেকশন-১ ও ২) লোহারপুলের পূর্ব অংশ এবং খোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। এদিকে, গতবারের চেয়ে এবার দুটি হাট বাড়িয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির নতুন হাটের একটি হচ্ছে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের স্স্নুইসগেট থেকে কামারপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত ফাঁকা জায়গা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতাদের চাপের মুখে এবার এ নতুন হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে ডিএনসিসি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গীসংলগ্ন এলাকার পশুর হাটের জন্য প্রতি বছরই উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের স্স্নুইসগেট রীতিমতো পশুর হাটে পরিণত হয়। এসব দিক বিবেচনা করে ওই হাট ইজারার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, রাজনৈতিক চাপে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের নতুন হাট ইজারার দরপত্র আহ্বান করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, ওই স্থানে হাট বসানো হলে এলাকার আবাসিক পরিবেশ নষ্ট হবে। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চল, টাঙ্গাইল, গাজীপুর এবং আরিচামুখী সড়কে ঈদের আগে তীব্র যানজট হবে। এ ব্যাপারে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতি গত ১০ জুন ডিএনসিসি মেয়র বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এর আগে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের হাটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। রাজউক কলেজসহ স্থানীয়রা ভোগান্তিতে নাকাল হতেন। এবার ১০ নম্বর সেক্টরে পশুর হাট ইজারা দেয়া হলে উত্তরা, আব্দুলস্নাহপুর হয়ে ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক হয়ে চলাচলকারী উত্তরাঞ্চল, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, দৌলতদিয়া, আরিচা, সাতুরিয়া, ফেরিঘাটমুখো শত শত গাড়ির হাজার হাজার যাত্রী চরম বিপাকে পড়বে। ঈদের আগে গাড়ির চাপ বাড়ায় এ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে, যার প্রভাব পড়বে রাজধানীর সর্বত্র। এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, 'উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের অস্থায়ী পশুর হাট ইজারার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার চিন্তা করছি। কেননা, ওই হাটের ব্যাপারে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ আসছে। শেষমেশ হয়তো ওই হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।'