ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে অভিযোগ গঠন ৩০ জুন

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সোমবার সাইবার ট্রাইবু্যনালে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় -ফোকাস বাংলা
নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৩০ জুন দিন রেখেছে আদালত। এই পুলিশ কর্মকর্তার জামিন আবেদন নাকচ করে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন সোমবার এই আদেশ দেন। সাইবার ট্রাইবু্যনাল পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রোববার বিকালে ঢাকার হাইকোর্ট এলাকা থেকে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ লাপাত্তা থাকার পর আগাম জামিন চাইতে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সোনাগাজী থানায় পাঠানো হয়েছিল বলে সেখান থেকে পুলিশের একটি দল ঢাকায় এসে সোমবার সকালে পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের দায়িত্ব বুঝে নেন। দুপুরে একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাকে পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায় নেয়া হয়। বাদামি রঙের টি-শার্ট ও কালো চশমা পরা মোয়াজ্জেমকে দুপুর সোয়া ২টার পর আদালত কক্ষে নেয়া হলে প্রথমে তাকে কাঠগড়ার বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়। থানা থেকে আনার পর কখনোই তার হাতে হাতকড়া দেখা যায়নি। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবী এবং আদালতের পেশকার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ আসামিকে কাঠগড়ার ভেতরে নেয়া হয়। মোয়াজ্জেমের পক্ষে আদালতে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী সালমা সুলতানা। আর জামিন আবেদনের শুনানি করেন মো. ফারুক আহাম্মাদ। এ মামলার বাদী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনও এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুননির সময় ওসি মোয়াজ্জেমকে আশপাশে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। শুনানি শেষে বিচারক মোজাম্মেলের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই সঙ্গে অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া প্রতিবেদনকে অভিযোগপত্র হিসেবে নিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৩০ জুন দিন ঠিক করে দেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় দায়ের করা এ মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে পুলিশ পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড হতে পারে। ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত গত মার্চ মাসে তার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলে ওসি মোয়াজ্জেম তাকে থানায় ডেকে জবানবন্দি নিয়েছিলেন। তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে সারাদেশে আলোচনা শুরুর হয়। তখন ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃতু্য হলে গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইবু্যনালে মামলা করেন আইনজীবী সুমন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোয়াজ্জেম বেআইনিভাবে মোবাইল ফোনে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও করেছেন এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছেন। পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানালে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এদিকে নুসরাতের মৃতু্যর পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠান হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে। কিন্তু আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিলে তা তামিল করা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ঠেলাঠেলি চলে। এই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমে পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবর আসে। ফলে পুলিশ বাহিনী তাদের কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারে আদৌ আন্তরিক কি না- সেই প্রশ্ন তোলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। ঈদের আগে মোয়াজ্জেম হোসেনের একটি আগাম জামিনের আবেদন হাইকোর্টে জমা পড়লেও সেই শুনানি তখন হয়নি। ফলে আদালতেও তাকে দেখা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে রোববার আদালত খুললে হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে নতুন করে আবেদন করেন এই পুলিশ পরিদর্শক। সেখান থেকে ফেরার সময়ই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।