শেষ ওভারে শামির হ্যাটট্রিকে ভারতের কষ্টার্জিত জয়

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯, ০০:৪৪

ক্রীড়া ডেস্ক
জয়ের খুব কাছে গিয়েও হলো না। ভারতকে হারিয়ে আফগানিস্তানের মহাকাব্য লেখাটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। মোহাম্মদ শামির শেষ ওভারের হ্যাটট্রিকে শেষ পর্যন্ত ১১ রানের জয়ে ঠিকই হারের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে নিল বিরাট কোহলির টিম ইন্ডিয়া। এরই ফলে দারুণ একটি মাইলফলক গড়ল ভারত। বিশ্বকাপে নিজেদের ৫০তম জয় তুলে নিল দলটি। শনিবার সাউদাম্পটনের দ্য রোজ বোলে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় শুরু হয় এই ম্যাচটি। যেখানে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। তবে ব্যাটিংয়ে নেমেই টের পায় গত পাঁচ ম্যাচে বাজে খেলে হারা আফগানদের শক্ত বোলিং ইউনিটকে। ব্যাটিং নিয়ে যেন ভুলই করেন বিরাট কোহলি। প্রতিপক্ষের বোলারদের তোপে, বিশেষ করে স্পিনারদের একের পর এক সাফল্যে কোণঠাসা ভারত শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারলেও ৮ উইকেট হারিয়ে ২২৪ রানের বেশি করতে পারেনি। তবে চেতন শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে হ্যাটট্রিক করা শামির তান্ডবে ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ২১৩ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। যদিও মোহাম্মদ নবীর হাফসেঞ্চুরি শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখিয়েছিল দলটিকে। ২২৫ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২০ রানে মোহাম্মদ শামির বলে ওপেনার হজরউলস্নাহ জাজাই (১০) বোল্ড হন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন গুলবাদিন নাঈব ও রহমত শাহ। তবে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে বিজয় শঙ্করকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফগান অধিনায়ক নাঈব। ৪২ বলে দুটি চারে ২৭ রান করেন তিনি। ২৯তম ওভারের চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ ভারতের দিকে নিয়ে আনেন পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। ডানহাতি এই বোলারের আঘাতে মাঠ ছাড়েন দুই সেট ব্যাটসম্যান রহমত শাহ (৩৬) ও হাশমতউলস্নাহ শহিদী (২১)। পরে যুজভেন্দ্র চাহালের বলে ব্যক্তিগত ৮ রানে বোল্ড হন আসগর আফগান। তবে মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ রানের জুটি গড়া নাজিবুলস্নাহ জাদরানকে ২১ রানে ফিরিয়ে ম্যাচ ফের ভারতের দিকে টেনে নেন হার্দিক পান্ডিয়া। আর ১৪ রান করা রশিদ খানকে চাহাল নিজের দ্বিতীয় শিকার বানালে জমে উঠে পুরো ম্যাচ। শেষ ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে নবী, আফতাব আলম ও মুজিব উর রহমানকে আউট করে হ্যাটট্রিক তুলে নেন মোহাম্মদ শামি। সেই সঙ্গে ভারতের জয়ও নিশ্চিত করেন এই ফাস্ট বোলার। নবী ৫৫ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন শামি। এছাড়া বুমরাহ, চাহাল ও পান্ডিয়া দুটি করে উইকেট ভাগ করে নেন। তবে ৪৯তম ওভারে দারুণ বল করা মাত্র ৫ রান দেয়া ও মোট ১০ ওভারে এক মেডেনসহ ৩৯ রান খরচায় ২ উইকেট পাওয়া বুমরাহ ম্যাচ সেরা হন। এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৬৪ রানের মধ্যেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। রানের চাকা ঘোরানো লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ নবী। নিজের করা প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই নবী ফেরান রাহুলকে। ৫৩ বলে ৩০ রান করা রাহুল হজরতুলস্নাহ জাজাইয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এর আগে, দলীয় মাত্র ৭ রানেই ফেরেন ওপেনার রোহিত শর্মা। ব্যক্তিগত এক রানে মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। দলীয় ১৩৫ রানে ভারতের চার উইকেট নিয়ে ম্যাচে নিজেদের লড়াইয়ের জানান দেয় আফগানিস্তান। যেখানে মোহাম্মদ নবীর বলে রহমত শাহ'র কাছে ক্যাচ দেন বিরাট কোহলি। দলীয় সর্বোচ্চ ৬৩ বলে ৫টি চারে ৬৭ রান করেন ভারতীয় অধিনায়ক। এর আগে রহমত শাহ'র বলে এলবি হয়ে ফেরেন বিজয় শঙ্কর (২৯)। তিনি তৃতীয় উইকেট জুটিতে বিরাট কোহলির সঙ্গে ৫৮ রান করেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কেদার যাদব লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেও ধীরগতিতে রান তুলতে থাকেন তারা। পরে ধোনি তো নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে স্টাম্পিং হন এদিন দুর্দান্ত বল করা রশিদ খানের বলে। টেস্টের মতো ব্যাট করা ধোনি ৫২ বলে ৩টি চারে ২৮ রান করেন। শেষ দিকে কেদার যাদবের ব্যাটেই মূলত দু'শ রানের কোটা পার করেন ভারত। তিনি গুলবাদিন নাঈবের বলে আউট হওয়ার আগে ৬৮ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৫২ রান করেন। ভারতীয় ইনিংসে এই একটি ছক্কাই এদিন দেখা যায়। আফগান বোলারদের মধ্যে দারুণ বল করা মোহাম্মদ নবী ও নাঈব সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট পান। তবে সবচেয়ে কৃপণ বোলিংয়ের তকমা জোটে মুবিজ উর রহমানের কপালে। ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নেন এই লেগস্পিনার। আফতাব আলম, রশিদ ও রহমত শাহ'ও একটি করে উইকেট ভাগ করে নেন।