রণদা প্রসাদ সাহা হত্যা মামলার রায় আজ

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রণদা প্রসাদ সাহা
মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলেসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় জানা যাবে আজ। অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা- গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে মাহবুবের বিরুদ্ধে। বুধবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল এ মামলার রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ট্রাইবু্যনাল গত ২৪ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। আসামিপক্ষে ছিলেন গাজি এমএইচ তামিম। ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ বছর বয়সী আসামি মাহবুবুর একাত্তরে মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি বৈরাটিয়া পাড়ার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। মাহবুবুর ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন। যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষে রানা দাশগুপ্ত বলেছিলেন, 'আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ এনেছিল প্রসিকিউশন। আমরা মনে করি তিনটি অভিযোগই আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলায় ১৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ আমরা উপস্থাপন করেছি তাতে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ড চেয়েছি।' আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম সেদিন বলেন, এ মামলায় যে কজন সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই বলেছেন আরপি সাহা নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে হত্যা করা হয়েছে এ কথা কোনো সাক্ষীই বলেননি। প্রসিকিউশনের একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন, তিনি ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আরপি সাহাকে তিনি চিনতেন না বলেছেন। ফলে এটাই প্রমাণ হয় যে, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে এর বিচার হচ্ছে। আমি মনে করি প্রসিকিউশন আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আমি আমার মক্কেলের খালাস চেয়েছি। গত বছর ১২ ফেব্রম্নয়ারি টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশন। ১১ ফেব্রম্নয়ারি অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ২৮ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইবু্যনাল। এক বছরের বেশি সময় পর বুধবার আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে ট্রাইবু্যনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। কে এই মাহবুব অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, মাহবুব একসময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন। তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন। ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ট্রাইবু্যনাল থেকে পরোয়ানা জারি হলে ওই বছরের নভেম্বরে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান। তার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সমম্বয়ক সানাউল হক। হান্নান খান তখন বলেছিলেন, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় হামলা চালায়। তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ ৭ জনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি। মানবহিতৈষী কাজে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকায় ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল রণদা প্রসাদ সাহাকে। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়। তিনি আর পি সাহা নামেও পরিচিত। রণদা প্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা; থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটন করেন আসামি মাহবুব।