৫ বছর ধরে ফলে এগিয়ে ছাত্রীরা

এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বুধবার রাজধানীর ভিকারুননেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস -ফোকাস বাংলা
উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। সার্বিকভাবে পাস করেছেন ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২৯ হাজার ২৬২ জন। সেই হিসাবে এবার উচ্চমাধ্যমিকে পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার পরীক্ষা হয়েছে 'সুন্দর' পরিবেশে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নকল সর্বোতভাবে বন্ধ হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি, প্রতারণা কিংবা গুজবের সৃষ্টি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ পাসের হারকে 'যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য ও ভালো' ফলাফল হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি আমাদের শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিলে ধীরে ধীরে আরও ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। সেটা আমার বিশ্বাস। কারণ আমি মনে করি ছেলেমেয়েরা ফেল করবে কেন? আমরা কতগুলো উদ্যোগও নিয়েছি যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগী হয়।' যারা এবার পাস করেছেন তাদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। আর যারা পাস করতে পারেননি তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'মন খারাপ করার কিছু নেই, আবার পরীক্ষা দেবে।' তিনি বলেন, 'এখন তো আরেকটা সুবিধাও আমরা করে দিয়েছি নীতিমালায়। একটা বা দুটো বিষয়ে যদি ফেল করে সেগুলোই আবার দিতে হবে, পুনরায় সব পরীক্ষা আবার দিতে হবে না।' শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা এ সুযোগগুলো সৃষ্টি করে দিয়েছি যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পাস করে, তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, স্বউদ্যোগে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে এবং বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে পারে।' চলতি বছর ১ এপ্রিল থেকে ২৩ মে দেশের দুই হাজার ৫৬০টি কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমানের লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা চলে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, ১০ শিক্ষা বোর্ডে এবার সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। এর মধ্যে এইচএসসিতে আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৭১ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪১ হাজার ৮০৭ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে এবার পাস করেছেন ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২ হাজার ২৪৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আর কারিগরি ও ভোকেশনাল বোর্ডে পাসের হার এবার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৬ জন। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। আর ৯০৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া সব শিক্ষার্থীই পাস করেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হলেও এবার প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চমাধ্যমিকের সব পরীক্ষা শেষ হয়। দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী এবারের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পর শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ) এবং নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও যেকোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে ফল জানতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ই-মেইলে কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠানের ফলাফলের সফট কপি পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ফলের হার্ডকপি সংগ্রহ করা যাবে। বোর্ড থেকে ফলাফলের কপি সরবরাহ করা হবে না। পাঁচ বছর ধরে এগিয়ে ছাত্রীরা এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা এগিয়ে। ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুধু এ বছরই নয়, ২০১৫ সাল থেকে পাঁচ বছর ধরেই এই পরীক্ষায় ছাত্রীরা ধারাবাহিকভাবে ছাত্রদের চেয়ে বেশি পাস করছে। এ বছর এই পরীক্ষায় ছাত্রীদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ৭০ দশমিক ২৩ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছিল। তখন ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। পরের বছরে ছাত্রীদের পাসের হার হয় ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। ওই বছর ছাত্রদের পাসের হার হয় ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে ছাত্রীদের পাসের হার ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৬৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর গেল বছর ছাত্রীদের পাসের হার হয় ৬৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। তখন ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর এ বছর ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। তবে ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা এগিয়ে রয়েছেন। এবার ১০টি শিক্ষাবোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৪ হাজার ৫৭৬ জন। আর ছাত্রী ২২ হাজার ৭১০ জন। বিদেশের কেন্দ্রে ৯৪.০৭% পাস এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার দেশের বাইরের কেন্দ্রে ৯৪ দশমিক ০৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। বিদেশের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২৭০ জন শিক্ষার্থী এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৫৪ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৬ জন। গত বছর বিদেশের কেন্দ্রগুলো থেকে ৯২ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। সেই হিসাবে বিদেশ কেন্দ্রে এবার পাসের হার কমেছে। ৪১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাস করেননি কেউ ২০১৯ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় সারাদেশে ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। ৯০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থীই পাস করেছেন। এবার মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ৮ হাজার ৯৮৫টি।