রেজাল্ট এলো নুসরাতেরও

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নুসরাত জাহান রাফি
ফেনীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। যৌন নিপীড়নের পর হুমকি-ধমকি মাথায় নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুটি পরীক্ষায় অংশ নেন নুসরাত। গতকাল সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফল বিবরণীতে দেখা যায়, কোরআন মাজিদ, হাদিস ও উসুলে হাদিস পরীক্ষায় নুসরাত জাহান রাফি 'এ' গ্রেড পেয়েছেন। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হুসাইন বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। নুসরাতসহ ২৭ জন ফেল করে। এই মাদ্রাসায় এবার পাসের হার ৮৬.৮৬ শতাংশ। নুসরাত জাহান রাফি মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল জানিয়ে মো. হুসাইন আরও বলেন, সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফল করত। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। দুই বিষয়ে পরীক্ষাও দেয় নুসরাত। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনরা শোক ধরে রাখতে পারছেন না। বুধবার মাদ্রাসায় পরীক্ষার ফলাফল জানতে আসা শিক্ষার্থীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখেও নেমে আসে শোকের অশ্রম্ন। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ফলাফল জানতে আসা নুসরাতের সহপাঠী তামান্না, নিশাত সুলতানা, নাসরিন সুলতানা, সাইফুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলাম জানান, নুসরাতেরও পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে আনন্দে থাকার কথা ছিল। কিন্তু পাষন্ডদের নির্মমতায় নুসরাত তাদের মাঝে নেই। দুটি পরীক্ষায় সে 'এ' গ্রেড পেয়েছেন। বাকি পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফলাফল করতেন বলে তারা জানান। এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না নুসরাতের স্বজনদের। নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের বিলাপ যেন থামতেই চায় না। শিরিনা আক্তার বলেন, 'আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।' কাঁদতে কাঁদতে নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, সকাল থেকে নুসরাতের বেশ কয়েকজন সহপাঠী ফোন দিয়ে রেজাল্টের খবর জানায়। কেউ 'এ' গ্রেড পেয়েছে, কেউ 'বি' গ্রেড। ওরা নুসরাতের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে। নুসরাত পরীক্ষা দিতে পারলে সেও ভালো রেজাল্ট করত বলে তারা জানায়। নোমান আরও বলেন, 'নুসরাত খুব মেধাবী ছিল। ২৭ তারিখের দুর্ঘটনার পর আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে নিরুৎসাহিত করেছিলাম। কিন্তু সে পরীক্ষায় অংশ নেবে। ১ ও ২ এপ্রিল দুটি পরীক্ষায় অংশও নেয় সে। পরে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।' চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে। এ ঘটনায় একই দিন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে তাকে পুলিশ আটক করে। এ ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সহযোগীরা নানাভাবে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। তারা মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে ৬ এপ্রিল নুসরাতকে কৌশলে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স থেকে ফেনী সদর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সেখানে ১০ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে নুসরাত মারা যায়।